২৭ মে ২০২৫, ৪:৩৮:২৮
প্রভাতী বার্তা ডেস্ক: আলোচিত শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, কুষ্টিয়া শহরের কালীশংকরপুর এলাকায় সোনার বাংলা মসজিদের পাশে একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে জালে ফেলা হয়। তাঁর সঙ্গে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী মোল্লা মাসুদসহ আটজনকে আটক করা হয়েছে। এ সময় পাঁচটি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১০টি ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্রটি।
নব্বইয়ের দশকে ঢাকার অপরাধ জগতে সুব্রত বাইন ছিলেন এক মূর্তিমান আতঙ্ক, যার নামে জড়িয়ে আছে অসংখ্য খুন, চাঁদাবাজি ও দরপত্র নিয়ন্ত্রণের মতো গুরুতর অভিযোগ।
সুব্রত বাইনের উত্থান ও অপরাধ কর্মকাণ্ড:
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, নব্বইয়ের দশকে মগবাজারের বিশাল সেন্টারকে কেন্দ্র করে সুব্রত বাইনের উত্থান ঘটে। শুরুতে তিনি এই বিপণিবিতানের নিকটবর্তী চাংপাই নামক একটি রেস্টুরেন্টের কর্মচারী ছিলেন। ধীরে ধীরে অপরাধ জগতের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন এবং একটা সময়ে বিশাল সেন্টারই হয়ে ওঠে তার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার মূল ঘাঁটি। একারণে অপরাধ জগতে তিনি ‘বিশালের সুব্রত’ নামেও পরিচিতি পান। তার আধিপত্য বিস্তারের পথে অসংখ্য খুন ও জখমের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়।
রাষ্ট্রীয় পুরস্কার ও ইন্টারপোলের রেড নোটিশ:
২০০১ সালের ২৫ ডিসেম্বর তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার যে ২৩ জন শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা প্রকাশ করেছিল, সুব্রত বাইন ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। সরকার তাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কারও ঘোষণা করেছিল। তার নামে এখনও ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি রয়েছে, যেখানে তার বর্তমান বয়স ৫৫ বছর উল্লেখ করা হয়েছে।
সহযোগী মোল্লা মাসুদ প্রসঙ্গ:
সুব্রত বাইনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী হলেন মোল্লা মাসুদ। সুব্রত বাইনের হাত ধরেই মোল্লা মাসুদ অপরাধ জগতে পা রাখেন বলে জানা যায়। মোল্লা মাসুদ মূলত রাজধানীর মতিঝিল ও গোপীবাগ এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতেন। ২০১৫ সালে তিনি ভারতে ধরা পড়েন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছিল। পরে জামিনে মুক্ত হয়ে ভারতেই অবস্থান করছিলেন বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্র নিশ্চিত করে। ২০০৩ সালের পর থেকে মোল্লা মাসুদকে আর বাংলাদেশে দেখা যায়নি। ভারতে তিনি আবু রাসেল মো. মাসুদ নামে পরিচিত হন এবং রিজিয়া সুলতানা নামে এক ভারতীয় নাগরিককে বিয়ে করে সেখানে বসবাস করছিলেন।
মোল্লা মাসুদের বিরুদ্ধেও রয়েছে গুরুতর সব অভিযোগ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সাবেক সাংসদ কামাল মজুমদারের ভাগনে মামুন হত্যা, পুরান ঢাকায় মুরগি মিলন হত্যা এবং খিলগাঁওয়ের তিলপাপাড়ায় ট্রিপল মার্ডার। এছাড়া, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অসংখ্য সাধারণ ডায়েরি (জিডি) রয়েছে। ২০০১ সালে ঘোষিত ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় মোল্লা মাসুদের নামও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
সুব্রত বাইনের গ্রেপ্তারের ঘটনাটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর জন্য একটি বড় সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে ৷