আন্তর্জাতিক

‘অপারেশন নার্নিয়া’: মোসাদের ‘হিট লিস্টে’ ইরানের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানীরা

২০ জুন ২০২৫, ৭:১৫:৪১

'Operation Narnia': Top Iranian Nuclear Scientists on Mossad's 'Hit List'
সংগৃহীত ছবি

প্রভাতী বার্তা, আন্তর্জাতিক ডেস্ক: চলমান ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যেই ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ ইরানের পরমাণু কর্মসূচির মূল বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য করে একটি গোপন সামরিক অভিযান পরিচালনা করেছে। ‘অপারেশন নার্নিয়া’ নামের এই অভিযানে ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু বিজ্ঞানীদের একে একে হত্যা করার দাবি করেছে ইসরায়েলের দৈনিক দ্য জেরুজালেম পোস্ট। এই অভিযানকে ‘রাইজিং লায়ন’ সামরিক অভিযানের একটি অংশ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।

অভিযানের বিস্তারিত ও টার্গেট তালিকা:

দ্য জেরুজালেম পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মোসাদের এই বিশেষ অভিযানের মূল পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিল ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা ইউনিট ৮২০০-এর ১২০ জন সদস্য এবং বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ দল। তাদের মূল টার্গেট ছিল ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) শীর্ষ নেতৃত্ব এবং পরমাণু প্রকল্প সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা।

অভিযানের আগে ইসরায়েল ইরানি বিজ্ঞানীদের চার স্তরের একটি ‘হিট লিস্ট’ তৈরি করেছিল। এই তালিকার সর্বোচ্চ স্তরে ছিলেন যেসব বিজ্ঞানীদের সামরিক ও কারিগরি দক্ষতা অত্যন্ত উচ্চ এবং যাদের বিকল্প খুঁজে পাওয়া কঠিন।

নিহত শীর্ষ বিজ্ঞানীরা:

অভিযানে নিহত বিজ্ঞানীদের তালিকায় যাদের নাম উঠে এসেছে:

  • ফেরেইদুন আব্বাসি (পারমাণবিক প্রকৌশল বিশেষজ্ঞ)
  • মোহাম্মদ মাহদি তাহরানচি (পদার্থবিদ)
  • আকবর মাতলালি জাদে (কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার)
  • সাঈদ বেরাজি (উপাদান প্রকৌশল বিশেষজ্ঞ)
  • আমির হাসান ফাকাহি (পদার্থবিদ)
  • আবদুল হামিদ মিনুশাহর (রিঅ্যাক্টর পদার্থবিদ)
  • মনসুর আসগারি (পদার্থবিদ)
  • আহমদ রেজা দাওলপারকি দরিয়ানি (পারমাণবিক প্রকৌশল বিশেষজ্ঞ)
  • আলি বাখায়ী কাতেহরেমি (যান্ত্রিক প্রকৌশলী)

‘টার্গেট ব্যাংক’ এবং মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ:

অভিযানের পরিকল্পনায় অংশ নেওয়া এক শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা জানান, ইসরায়েল একটি ‘লক্ষ্য-ব্যাংক’ তৈরি করছিল। একটি গোয়েন্দা ঘাঁটি ও একটি বিমান ঘাঁটি শনাক্ত করার পর বিভিন্ন দলে ভাগ করে মিশন চালানো হয় — কেউ রাডার ধ্বংস করে, কেউ কমান্ড সেন্টার, আর কেউ বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য করে।

এই অভিযানের আরেকটি চমকপ্রদ দিক হলো ইসরায়েলের নতুন কৌশল – মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) পক্ষ থেকে ‘পার্সিয়ান ভাষায়’ একটি বার্তা এক্স-এ (সাবেক টুইটার) পোস্ট করা হয়, যেখানে ইরানি নাগরিকদের মোসাদের সঙ্গে যোগাযোগের আহ্বান জানানো হয়। বার্তায় বলা হয়, “আমরা বুঝতে পারি, আপনি কঠিন অবস্থার মধ্যে আছেন। আমাদের প্রিয়জনেরা যারা এই পরিস্থিতির শিকার, তারাও ইসরায়েলকে বার্তা দিচ্ছে যেন ইরানকে গাজা বা লেবাননের মতো ভাগ্য না ভোগ করতে হয়।” বার্তার শেষে মোসাদের একটি লিংক শেয়ার করে ভিপিএন বা এনক্রিপটেড সংযোগ ব্যবহার করে যোগাযোগের কথা বলা হয়।

বিশ্লেষকদের মত:

বিশেষজ্ঞদের মতে, মোসাদের এই ‘অপারেশন নার্নিয়া’ কেবল একটি সামরিক অভিযান নয়, এটি ইরানের পরমাণু প্রকল্পে দীর্ঘদিনের দক্ষতাসম্পন্ন বিজ্ঞানীদের সরিয়ে দেওয়ার কৌশলী । এর মাধ্যমে ইসরায়েল একদিকে যেমন ইরানের পারমাণবিক অগ্রগতি থামাতে চায়, অন্যদিকে তেহরানের অভ্যন্তরে আতঙ্ক ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে।

আরও খবর:

বিবিধ