আন্তর্জাতিক

বিশ্ববাজারে বাড়লো জ্বালানি তেলের দাম

১১ জুন ২০২৫, ১:০৯:৫৮

The price of fuel oil has risen in the global market.
বিশ্ববাজারে বাড়লো জ্বালানি তেলের দাম

প্রভাতী বার্তা, আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বিশ্ববাজারে আবারও বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য আলোচনায় অগ্রগতির সম্ভাবনা এবং সৌদি আরবের চীনে অপরিশোধিত তেল সরবরাহ কিছুটা কমে যাওয়ার পূর্বাভাসের কারণে এই মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে।

মঙ্গলবার (১০ জুন) বিজনেস রেকর্ডারের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৩৪ সেন্ট বা ০.৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৭.৩৮ ডলারে। অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ক্রুডের দামও ৩৩ সেন্ট বা ০.৫ শতাংশ বেড়ে ৬৫.৬২ ডলারে পৌঁছেছে। এর আগের দিন ব্রেন্টের দর ৬৭.১৯ ডলারে উঠেছিল, যা গত ২৮ এপ্রিলের পর সর্বোচ্চ ছিল।

বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে লন্ডনে দ্বিতীয় দিনের মতো চলতে থাকা বাণিজ্য আলোচনা বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করেছে। অনিক্স ক্যাপিটাল গ্রুপের গবেষণা প্রধান হ্যারি টচিলিন গুরিয়ান বলেন, “বাণিজ্য আলোচনাগুলো ঘিরে আশার একটি বাতাস বইছে। বাজার এখন এর ফলাফলের অপেক্ষায় এবং এই প্রত্যাশাই তেলের দাম বাড়াতে সহায়তা করছে।”

গোল্ডম্যান স্যাকস-এর বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র-চীন আলোচনার ইতিবাচক গতি এবং যুক্তরাষ্ট্রের কর্মসংস্থানের সদর্থক প্রতিবেদন বিশ্ববাজারে তেলের চাহিদা নিয়ে উদ্বেগ কমিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার (০৯ জুন) জানান, তিনি তার লন্ডনে অবস্থানরত দলের কাছ থেকে ‘শুধু ভালো খবর’ পাচ্ছেন এবং আলোচনার অগ্রগতিতে তিনি সন্তুষ্ট। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই আলোচনা যদি একটি বাণিজ্য চুক্তিতে উপনীত হয়, তবে তা বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক বার্তা বয়ে আনবে এবং পণ্যের মধ্যে বিশেষ করে তেলের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে।

এদিকে, সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি সৌদি আরামকো জুলাই মাসে চীনে প্রায় ৪৭ মিলিয়ন ব্যারেল তেল রপ্তানি করবে বলে জানিয়েছে, যা জুন মাসের তুলনায় ১০ লাখ ব্যারেল কম। এই পরিস্থিতি ওপেক প্লাস জোটের ঘোষিত উৎপাদন বৃদ্ধির মধ্যেও সরবরাহে ভারসাম্যের ইঙ্গিত দিচ্ছে। হ্যারি টচিলিন গুরিয়ান আরও বলেন, “সৌদি আরব যেহেতু সবচেয়ে বেশি উৎপাদনে সক্ষম, সেখান থেকেও তেমন বাড়তি সরবরাহ না থাকায় বোঝা যাচ্ছে ওপেক প্লাসের উৎপাদন বৃদ্ধির ঘোষণা বাস্তবে খুব বেশি প্রভাব ফেলছে না।”

উল্লেখ্য, ওপেক প্লাস জোট, যারা বিশ্বের মোট উৎপাদিত তেলের প্রায় অর্ধেক সরবরাহ করে, জুলাই মাসের জন্য দৈনিক ৪ লাখ ১১ হাজার ব্যারেল উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনা করেছে। এটি টানা চতুর্থ মাসের জন্য উৎপাদন বাড়ানোর পদক্ষেপ। তবে রয়টার্সের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, মে মাসে ওপেকের উৎপাদন সীমিত আকারেই বেড়েছে। ইরাক পূর্বের অতিরিক্ত উৎপাদনের ক্ষতিপূরণ হিসেবে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম তেল উত্তোলন করেছে এবং সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত অনুমোদিত সীমার চেয়ে তুলনামূলক কম মাত্রায় উৎপাদন বৃদ্ধি করেছে।

অন্যদিকে, ইরান সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রস্তাবকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে পাল্টা প্রস্তাব দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। যদি ইরান যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি পায়, তবে তারা তেল রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে পারবে, যা বিশ্ববাজারে তেলের দামে আবারও চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

সব মিলিয়ে, বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তেলের বাজার বর্তমানে নানা ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মুখে দাঁড়িয়ে আছে। যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য আলোচনা, ওপেক প্লাসের উৎপাদন নীতি এবং ইরান ইস্যু—এই সব কারণ আগামী দিনগুলোতে তেলের দামে বড় ধরনের ওঠানামা ঘটাতে পারে।

আরও খবর:

বিবিধ