বাণিজ্য

বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্ক আরও সুদৃঢ়: ৬ সমঝোতা স্মারক সই

৩০ মে ২০২৫, ১১:৪২:১৪

Bangladesh-Japan relations further strengthened: 6 memorandums of understanding signed
বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্ক আরও সুদৃঢ়: ৬ সমঝোতা স্মারক সই

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের জাপান সফরের তৃতীয় দিনে, শুক্রবার, টোকিওতে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে অর্থনৈতিক, বিনিয়োগ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে। ‘বাংলাদেশ বিজনেস সেমিনার’ শীর্ষক এক সেমিনারের সাইডলাইনে প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে এই চুক্তিগুলো সম্পন্ন হয়।

এই সমঝোতা স্মারকগুলি বিভিন্ন খাতে অংশীদারিত্বের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকগুলোর বিবরণ:

১. জ্বালানি খাতে সহযোগিতা: জাপান ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন (জেবিআইসি) এবং বাংলাদেশের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে প্রথম সমঝোতা স্মারকটি স্বাক্ষরিত হয়। এর মাধ্যমে জ্বালানি প্রকল্পে অর্থায়ন ও বাস্তবায়নে উভয় দেশের সহযোগিতা আরও জোরদার হবে।

২. অর্থনৈতিক অঞ্চলে গ্যাস মিটার কারখানা: জাপানের অনোডা ইনকর্পোরেটেড ও বাংলাদেশ এসইজেড লিমিটেডের (বিএসইজেড) মধ্যে দ্বিতীয় সমঝোতা স্মারকটি সই হয়েছে। এর আওতায় অনোডা বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমি লিজ নিয়ে গ্যাস মিটারের অ্যাসেম্বলি, ইন্সপেকশন ও রক্ষণাবেক্ষণ কারখানা স্থাপন করবে। উল্লেখ্য, অনোডা ইতিমধ্যে জাইকার উদ্যোগে একটি গ্যাস মিটার স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।

৩. গার্মেন্টস এক্সেসরিজ উৎপাদন: বাংলাদেশ নেক্সিস কো. লিমিটেড এবং বাংলাদেশ এসইজেড লিমিটেডের মধ্যে তৃতীয় সমঝোতা স্মারকটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমি লিজ সংক্রান্ত। এই চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ নেক্সিস কো. একটি কারখানায় গার্মেন্টস এক্সেসরিজ উৎপাদন করবে।

৪. বৈদ্যুতিক যান উৎপাদন: চতুর্থ সমঝোতা স্মারকে গ্লাগিট, মুসাসি সিমিতিসু ইন্ডাস্ট্রি গ্লাফিট এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) মধ্যে ব্যাটারি চালিত বাইসাইকেল ও বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেল তৈরির কারখানা স্থাপনে সহযোগিতার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।

৫. কোয়ান্টাম-প্রতিরোধী ডিজিটাল অর্থনীতি: জাপানের কিপার কোর কো. লিমিটেডের সঙ্গে পঞ্চম সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর আওতায় বাংলাদেশে ২ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগে ‘তাকাতোসি নাকামোরা পুরস্কারপ্রাপ্ত’ পূর্ণাঙ্গ কিপার প্রযুক্তি ব্যবহার করে তথ্য সুরক্ষায় একটি জাতীয় পাইলট প্রকল্প শুরু হবে। এই প্রকল্পের লক্ষ্য বাংলাদেশকে একটি কোয়ান্টাম-প্রতিরোধী ডিজিটাল অর্থনীতিতে রূপান্তর করা এবং প্রযুক্তির প্রয়োগ ও বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারণের একচেটিয়া অধিকার স্থানীয় প্রতিষ্ঠানকে প্রদান করা।

৬. বিনিয়োগ সেবায় সিঙ্গেল উইন্ডো: ষষ্ঠ সমঝোতা স্মারকটি জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ও বিডার মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর মাধ্যমে জাইকা সমন্বিত সিঙ্গেল উইন্ডো প্ল্যাটফর্মের (আইএসডব্লিউপি) প্রাথমিক উন্নয়নে কারিগরি ও অন্যান্য সহযোগিতা দেবে। বিডার নেতৃত্বে এই প্ল্যাটফর্মটি বাংলাদেশের বিভিন্ন বিনিয়োগ উন্নয়ন সংস্থার সেবাকে এক ছাতার নিচে আনবে।

প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য:
স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এমওইউ স্বাক্ষরকারী সকল পক্ষকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, “এখন আমাদের কাজ এর বাস্তবায়ন করা। আমি অভিভূত।”

গত ১৬ বছরে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এই সময়ে দেশটিতে একের পর এক ভূমিকম্প হয়েছে, যার ফলে কিছুই অক্ষত ছিল না। এই পরিস্থিতিতে একজন ভালো বন্ধু এগিয়ে এলো। আর সেই বন্ধু হলো জাপান। আমি এখানে এসেছি আপনাদের ধন্যবাদ জানাতে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করতে।”

এই চ্যালেঞ্জকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, “আমরা ইতিহাসকে দেখাতে চাই যে, এটি সম্ভব হয়েছে, তা-ও নিখুঁতভাবে। আমরা আমাদের বেল্ট শক্ত করে ধরে বলেছি, আমরা কাজ করতে প্রস্তুত। আপনাদের সহায়তায় এটা সম্ভব।” তিনি সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “চলুন হাতে হাত মিলিয়ে বাস্তবায়ন করি। এটা শুধু অর্থ উপার্জনের বিষয় নয়। এটা মানুষের জীবন পরিবর্তনের বিষয়।”

জাপানের প্রতিক্রিয়া:
অনুষ্ঠানে জাপানের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় ভাইস মিনিস্টার শিনজি তাকেউচি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে কর্মরত জাপানি কোম্পানির সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়ে গেছে, যা দশ বছর আগের তুলনায় তিন-চতুর্থাংশ বেশি। এটি বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগের ক্রমবর্ধমান আগ্রহের প্রতিফলন।

এই সমঝোতা স্মারকগুলো স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।

আরও খবর:

বিবিধ