১৯ জুন ২০২৫, ৮:২০:৪৮
নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রভাতী বার্তা: নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় জনি সরকার (২৫) নামে এক যুবকের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। মাদকাসক্ত ছেলের অব্যাহত নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বাবা-মা মিলেই তাকে হত্যা করে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে ড্রেনে ফেলে দেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। এই ঘটনায় নিহত জনির বাবা করুণা সরকার ও মা অসিতা রানী সরকার-কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দুপুরে ফতুল্লা মডেল থানা কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (‘ক’ সার্কেল) মো. হাসিনুজ্জামান এই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. হাসিনুজ্জামান জানান, গ্রেফতারকৃত করুণা সরকার ও অসিতা রানী সরকার সিলেট জেলার জামালগঞ্জ থানার বিষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা। তারা ফতুল্লার পূর্ব শিহাচর লালখাঁ এলাকায় দুলাল পুলিশের বাড়িতে তিন সন্তান নিয়ে ভাড়া থাকতেন। বাবা করুণা সরকার ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নৈশপ্রহরীর চাকরি করেন। তাদের একমাত্র ছেলে জনি সরকার স্থানীয় মাদকাসক্ত ও বখাটে যুবকদের সাথে চলাফেরা করে নিজেও মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছিল। মাদকের টাকার জন্য জনি প্রায় সময় তার বাবা-মাকে মারধরসহ নানাভাবে নির্যাতন করতো। এই অত্যাচার ও নির্যাতনের মাত্রা দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় বাবা-মা অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও জানান, গত ১৬ জুন রাতেও জনি মাদকের টাকার জন্য তার বাবা ও মাকে মারধর করে। এরপর রাতে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে বাবা করুণা সরকার রুটি বানানোর বেলুন দিয়ে জনির মাথায় ও মুখমণ্ডলে আঘাত করেন। একপর্যায়ে ঘুমন্ত জনির দেহ নিথর হয়ে পড়লে তার গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। পরে মা অসিতা রানী সরকারের সহযোগিতায় তারা জনির হাত-পা বেঁধে প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে গভীর রাতে সড়কের পাশের ড্রেনে ফেলে দিয়ে বাসায় চলে যান। পরদিন ১৭ জুন সকালে ওই ড্রেন থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় জনির লাশ উদ্ধার করে ফতুল্লা থানা পুলিশ।
প্রাথমিকভাবে, লাশ উদ্ধারের ঘটনায় নিহত জনির বাবা করুণা সরকার নিজেই বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে ফতুল্লা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তবে, মামলার তদন্ত এবং ঘটনাস্থলের পাশের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ পর্যবেক্ষণে হত্যাকাণ্ডের এই চাঞ্চল্যকর রহস্য বেরিয়ে আসে। সিসিটিভি ফুটেজে দূর থেকে এক ব্যক্তির অস্পষ্ট ফুটেজ দেখা যায়, যার চলাফেরা ও আচরণ নিহত জনির বাবা করুণা সরকারের মতো ছিল। এর ভিত্তিতে বুধবার (১৮ জুন) রাতে পুলিশ বাবা-মা দুজনকেই গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা ছেলেকে হত্যার কথা স্বীকার করে বিস্তারিত বর্ণনা দেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. হাসিনুজ্জামান আরও বলেন, “জনি সরকারের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তার বাবা করুণা সরকার নিজে বাদী হয়ে মামলা করলেও এখন তিনি আসামি। আর তার এই কাজে সহযোগী হিসেবে তার স্ত্রীকেও আসামি করা হয়েছে। এখন পুলিশ বাদী হয়ে আরেকটি হত্যা মামলা করবে।”