অন্যান্য

পুরান ঢাকায় প্রকাশ্যে মাথা থেঁতলে হত্যা: ৪ জন গ্রেপ্তার, যুবদলের ২ নেতা বহিষ্কার

১২ জুলাই ২০২৫, ১:৩৮:৫৭

Public head crushing murder in Old Dhaka: 4 arrested, 2 leaders of Jubo Dal expelled

পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে এক ভাঙারি ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে কংক্রিটের বোল্ডার দিয়ে নির্মমভাবে মাথা থেঁতলে হত্যার ঘটনায় সারাদেশে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় বইছে। লোমহর্ষক এই হত্যাকাণ্ডের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় সাধারণ মানুষ শিউরে উঠেছে। পুলিশ এই ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়েছে, এবং মামলার ১৯ আসামির মধ্যে যুবদলের কেন্দ্রীয় ও মহানগর পর্যায়ের দুই নেতা জড়িত থাকায় দল থেকে তাদের আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।

বুধবার (৯ জুলাই) বিকেলে মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটকের সামনে ভাঙারি ও পুরনো তারের ব্যবসায়ী মো. সোহাগ ওরফে লাল চাঁদকে প্রকাশ্যে এই পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করা হয়।

নির্মম হত্যাকাণ্ড ও তদন্তের প্রাথমিক গতি: পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিরা এবং নেপথ্যে যাদের নাম আসছে, তারা সবাই পূর্ব পরিচিত। এমনকি একসময় তাদের কয়েকজন নিহত সোহাগের ব্যবসার সহযোগীও ছিলেন। ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব ও পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এই ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। এত ভয়ঙ্করভাবে কাউকে হত্যা করা হতে পারে, তা পরিচিতজনদের ধারণারও বাইরে ছিল।

নিহত সোহাগের বড় বোন কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ভিডিও সংগ্রহ করে এবং বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এজাহারভুক্ত আসামি মাহমুদুল হাসান মহিন (৪১) এবং তারেক রহমান রবিন (২২) কে গ্রেপ্তার করে। রবিনের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও, র‍্যাব এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে, যার ফলে মোট গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে চারজন। গ্রেপ্তারকৃত মহিনকে পাঁচ দিন এবং রবিনকে দুই দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মফিজুল ইসলাম বলেন, “কেন এই নৃশংসতা, তা নিয়ে অনেকের কাছেই আমাকে প্রশ্নের জবাব দিতে হচ্ছে। আমরা যাদের গ্রেপ্তার করেছি, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এখনো চূড়ান্ত তথ্য জানাতে পারছি না। আমরা শুধু জানি যে সেখানে নৃশংস একটা ঘটনা ঘটেছে। এই হত্যার প্রকৃত উদ্দেশ্য কী, কেন এভাবে হত্যা করা হল, তা জানার চেষ্টা চলছে।”

রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ও বহিষ্কার: এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও উঠেছে। স্থানীয় একজন বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, পুরনো তারের ব্যবসার একটি বড় সিন্ডিকেট এই এলাকায় সক্রিয়, যা সোহাগ নিয়ন্ত্রণ করতেন। গ্রেপ্তার হওয়া মহিন তার দলবল নিয়ে ওই সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন এবং এ নিয়ে তাদের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠকও হয়েছিল। জড়িতদের কয়েকজন স্থানীয় যুবদলের রাজনীতিতে জড়িত বলে জানা গেছে, এবং নিহত সোহাগও একসময় যুবদল করতেন।

follow-google-news-provati-barta

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলার ১৯ আসামির মধ্যে যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সহ-জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক রজ্জব আলী পিন্টু এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাবাহ করিম লাকি’র নাম আসার পর দল তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জাতীয়তাবাদী যুবদল এই দুই নেতাকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে। যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম নয়ন ইতোমধ্যেই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। যুবদল এই ঘটনার তদন্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কোনো ধরনের শৈথিল্য না দেখিয়ে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছে।

ভিডিও ক্লিপ দেখুন

পুরো ঘটনাটি জনমনে ব্যাপক প্রশ্ন তৈরি করেছে এবং অপরাধীদের দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি উঠেছে। ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে এবং জড়িত অন্যান্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

আরও খবর:

বিবিধ