১৩ জুন ২০২৫, ৪:৫৫:১৯
প্রভাতী বার্তা ডেস্ক: বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এবং বহু আলোচিত একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি হলো আজ লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে অনুষ্ঠিত একান্ত বৈঠক শেষ হয়েছে। সকাল ৯টায় (স্থানীয় সময়) শুরু হয়ে সকাল সাড়ে ১০টায় (স্থানীয় সময়) বৈঠকটি শেষ হয়, যা দেড় ঘণ্টার মতো স্থায়ী হয়।
এই বৈঠকটি কেবল একটি প্রথাগত সাক্ষাৎ ছিল না, বরং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক গতিপথ নির্ধারণে এর গুরুত্ব অপরিসীম। গত বছরের ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে এটিই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান এবং বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির দ্বিতীয় শীর্ষ নেতার প্রথম আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎ। দেশের রাজনৈতিক সংকট নিরসন, আগামী জাতীয় নির্বাচন, নির্বাচনকালীন সংস্কার এবং বহুল আলোচিত ‘জুলাই ঘোষণা’ সহ নানা অমীমাংসিত বিষয় নিয়ে এই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
একান্ত বৈঠকের নেপথ্যে:
বৈঠক শুরুর আগে তারেক রহমান ডরচেস্টার হোটেলে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। বৈঠকটি অত্যন্ত গোপনীয়তা ও একান্তে অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম নিশ্চিত করেছেন যে, তাদের মধ্যে একান্ত আলোচনা হয়েছে। তবে, বৈঠক শেষে উভয় পক্ষের প্রতিনিধিরা একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলন করবেন বলেও তিনি জানিয়েছেন। এই সংবাদ সম্মেলন থেকে বৈঠকের বিস্তারিত এজেন্ডা এবং আলোচনার ফলাফল সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রত্যাশা ও বিশ্লেষণ:
এই বৈঠককে ঘিরে দেশের আপামর জনসাধারণ, রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং আন্তর্জাতিক মহল – সকলের মধ্যেই ছিল ব্যাপক কৌতূহল। আগামী জাতীয় নির্বাচনের সময়, পদ্ধতি এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভূমিকা নিয়ে যে বিতর্ক চলছে, তার সমাধানের একটি পথ এই বৈঠক থেকে বেরিয়ে আসতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। বিশেষত, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং বিএনপির পক্ষ থেকে উত্থাপিত বিভিন্ন দাবির বিষয়ে কী ধরনের সমঝোতা হয়েছে, তা নিয়েই এখন সকলের দৃষ্টি।
বৈঠকের নির্ধারিত সময় দুই ঘণ্টা থাকলেও, দেড় ঘণ্টাতেই তা শেষ হওয়া কিছুটা বিস্ময়কর হলেও, এর তাৎপর্য নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে। এর কারণ হতে পারে, হয় তাদের মধ্যে মূল বিষয়গুলোতে দ্রুতই ঐকমত্য হয়েছে, অথবা কিছু বিষয়ে এখনও আলোচনা বাকি রয়ে গেছে যা পরবর্তী ধাপে সমাধান হবে।
ভবিষ্যৎ পথরেখা:
ড. ইউনূস এবং তারেক রহমানের এই বৈঠক বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। এর ফলাফল দেশের স্থিতিশীলতা, গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ এবং জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কতটা সহায়ক হবে, তা দেখার জন্য এখন অপেক্ষা করতে হবে যৌথ সংবাদ সম্মেলনের জন্য। এই বৈঠক কি সত্যিই নতুন ভোরের সূচনা করবে, নাকি কেবল দীর্ঘ প্রতীক্ষার শেষ, তা সময়ই বলে দেবে। তবে, একটি বিষয় স্পষ্ট যে, এই বৈঠক দেশের ভবিষ্যতের জন্য এক নতুন আশার আলো নিয়ে এসেছে, যা বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করবে।