আন্তর্জাতিক

ইরানে ইসরায়েলি হামলা: ট্রাম্প জানতেন আগেই?

১৩ জুন ২০২৫, ১১:০১:৪৯

Israeli attack in Iran: Did Trump know beforehand?
ইরানে ইসরায়েলি হামলা: ট্রাম্প জানতেন আগেই?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:বৃহস্পতিবার রাতে (১২ জুন) ইরানে ইসরায়েলের হামলার ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে নতুন করে উত্তপ্ত করে তুলেছে। এই হামলার পরপরই আন্তর্জাতিক মহলে একটি বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে: যুক্তরাষ্ট্র কি এই হামলা সম্পর্কে আগে থেকেই অবহিত ছিল? মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও হামলার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত থাকার দাবি অস্বীকার করলেও, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্য পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প স্পষ্ট জানিয়েছেন, ইসরায়েলের এই হামলার পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি আগে থেকেই অবগত ছিলেন।

ট্রাম্পের পূর্ব সতর্কতা ও ‘বড় সংঘর্ষের’ ইঙ্গিত:

ইরানে হামলার ঠিক কয়েক ঘণ্টা আগে, গত বৃহস্পতিবার (১২ জুন) রাতে ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে একটি ‘বড় সংঘর্ষের শঙ্কা’ সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। তার এই মন্তব্য থেকে তখনই ধারণা করা হচ্ছিল যে, এই অঞ্চলে বড় ধরনের কোনো সামরিক পদক্ষেপ আসন্ন। ট্রাম্পের এমন ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্যের পরপরই ইসরায়েলের হামলা ঘটনাটি ঘটে, যা তার পূর্বানুমানের সত্যতা প্রমাণ করে।

আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার শঙ্কা বনাম ইসরায়েলের কৌশল:

আক্রমণের আগে ট্রাম্প সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন যে তিনি সংঘর্ষ এড়াতে চান এবং ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলকে হামলা না করার পরামর্শও দিয়েছিলেন। তিনি জোর দিয়েছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে যতক্ষণ আলোচনার সুযোগ রয়েছে, ততক্ষণ এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত নয় যা সেই আলোচনা প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারে। ট্রাম্পের ভাষ্য ছিল, “ইরানের সঙ্গে একটি চুক্তি করতে চাই আমরা। এই চুক্তির বেশ কাছাকাছিও চলে এসেছি আমরা। আমরা যতক্ষণ মনে করি যে চুক্তির সুযোগ আছে সামনে, ততক্ষণ ইসরায়েল আগ বাড়িয়ে ইরানে হামলা চালাক, তা আমি চাই না। এতে চুক্তিটা ভেস্তে যেতে পারে। আবার সাহায্যও করতে পারে বিষয়টা, যদিও সেটা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।” ট্রাম্পের এই মন্তব্য থেকে বোঝা যায়, ইসরায়েলের এই হামলা যুক্তরাষ্ট্রের ইরান নীতিকে কতটা চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ কি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের সম্ভাব্য পারমাণবিক চুক্তির সম্ভাবনাকে নষ্ট করবে, নাকি ভিন্ন কোনো কৌশলগত উদ্দেশ্য সাধন করবে, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে নানা মত প্রচলিত আছে।

মার্কিন কর্মীদের সরিয়ে নেওয়া এবং পূর্ব সতর্ক বার্তা:

ইরানের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষিতে, গত বৃহস্পতিবারই ইরাকের বাগদাদে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস থেকে অপ্রয়োজনীয় কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সরিয়ে নেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্র সরকার জানায়, এটি ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য সংঘাতের আশঙ্কার কারণে করা হয়েছে। সিবিএস সহ একাধিক সংবাদমাধ্যমের খবরে মার্কিন কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্র শঙ্কা করছিল যে, ইসরায়েলের ‘সম্ভাব্য’ হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান যুক্তরাষ্ট্রের কিছু স্থাপনায় হামলা করতে পারে। যে কারণে যুক্তরাষ্ট্র তাদের নাগরিকদের মধ্যপ্রাচ্য ছেড়ে যাওয়ার পরামর্শও দিয়েছিল। এই পদক্ষেপগুলোই হামলার পূর্ব লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

ট্রাম্পের স্পষ্ট স্বীকারোক্তি ও আলোচনার আশা:

হামলার পর ফক্স নিউজে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড ট্রাম্প পরিষ্কার জানিয়েছেন যে, ইরানে ইসরায়েলি হামলার পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি আগে থেকেই জানতেন। তবে, তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে, এই হামলায় মার্কিন সামরিক বাহিনীর কোনো হাত ছিল না। এরপরও ট্রাম্প আশা করছেন যে, ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবে। তিনি বলেন, “ইরান পারমাণবিক বোমা রাখতে পারে না এবং আমরা আলোচনার টেবিলে ফিরে আসার আশা করছি। আমরা দেখব।”

ট্রাম্পের এই মন্তব্য মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান জটিল পরিস্থিতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। একদিকে ইসরায়েলের আগ্রাসী পদক্ষেপ, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনার আকাঙ্ক্ষা – এই দ্বৈত নীতি কীভাবে মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ সংঘাতকে প্রভাবিত করবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। এই হামলা কি ইরানকে আলোচনার টেবিলে আনবে, নাকি আরও বড় সংঘাতের দিকে ঠেলে দেবে, তা নিয়েই এখন আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র জল্পনা-কল্পনা চলছে।

আরও খবর:

বিবিধ