খেলা

ব্যাটিং বিপর্যয়ে সিরিজ হার বাংলাদেশের

৯ জুলাই ২০২৫, ১২:৫৮:০৭

Bangladesh loses the series in a batting disaster.
ছবি : সংগৃহীত

ব্যাটিং বিপর্যয়ে সিরিজ হার বাংলাদেশের: পাল্লেকেলের মাঠে স্বপ্নভঙ্গ টাইগারদের

শ্রীলঙ্কার মাটিতে ইতিহাস গড়ার স্বপ্ন নিয়ে নেমেছিল বাংলাদেশ, কিন্তু সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ব্যাটিং ব্যর্থতার চরম নজির রেখে সেই স্বপ্ন গুঁড়িয়ে গেল। ক্যান্ডির পাল্লেকেলে আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে শ্রীলঙ্কার ছুড়ে দেওয়া ২৮৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে মেহেদী হাসান মিরাজের দল ৩৯.৪ ওভারে মাত্র ১৮৬ রানে অলআউট হয়ে যায়, ফলস্বরূপ ৯৯ রানের বিশাল পরাজয় এবং ২-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ হাতছাড়া। এর আগে টেস্ট সিরিজেও লঙ্কানদের কাছে ১-০ ব্যবধানে হেরেছিল বাংলাদেশ।

শ্রীলঙ্কার ইনিংস: কুশল মেন্ডিসের সেঞ্চুরি ম্যাজিক টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শ্রীলঙ্কা ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৮৫ রানের একটি চ্যালেঞ্জিং স্কোর দাঁড় করায়। দলের রানের সিংহভাগই আসে উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান কুশল মেন্ডিসের অসাধারণ ব্যাট থেকে। তিনি ১১৪ বলে ১২৪ রানের এক ঝলমলে ইনিংস খেলেন, যেখানে ১৮টি বাউন্ডারি ছিল। ইনিংসের শুরুতে কিছুটা ধীরগতিতে খেললেও, মাঝপথে এসে তিনি ছন্দে ফেরেন এবং অধিনায়ক চারিথ আসালাঙ্কার (৬৮ বলে ৫৮ রান) সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে ১২৪ রানের একটি গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়েন। মেন্ডিস ও আসালাঙ্কার এই দৃঢ়তাই শ্রীলঙ্কাকে একটি বড় পুঁজি এনে দেয়।

বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাসকিন আহমেদ দুটি করে উইকেট লাভ করেন। তানজিম হাসান সাকিব ও তানভীর ইসলাম একটি করে উইকেট পেলেও, বোলারদের লাইন-লেন্থে ধারাবাহিকতার অভাবে মেন্ডিসদের আটকানো যায়নি। বিশেষ করে পাল্লেকেলের ফ্ল্যাট উইকেটে যেখানে বোলারদের ‘বিশেষ কিছু’ করার প্রয়োজন ছিল, সেখানে বাংলাদেশের বোলিং সেভাবে বিষদাঁত বের করতে পারেনি। গ্রাউন্ড ফিল্ডিংয়ের ঢিলেঢালাভাবও শ্রীলঙ্কার রান বাড়াতে সহায়তা করে।

বাংলাদেশের ব্যাটিং বিপর্যয়: একাই লড়লেন হৃদয় ২৮৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ শুরুতেই চরম চাপে পড়ে যায়। দুশমন্ত চামিরা ও আসিথা ফার্নান্দো – শ্রীলঙ্কার এই দুই পেসার শুরু থেকেই আগুন ঝরান এবং বাংলাদেশের টপ অর্ডারকে ধসিয়ে দেন। তৃতীয় ওভারেই নাজমুল হোসেন শান্ত শূন্য রানে সাজঘরে ফেরেন। এরপর দুই ওপেনার ও শান্তকে হারিয়ে দল চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে।

ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিলে একমাত্র তাওহীদ হৃদয় কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন। ৭৫ বলে ৫১ রানের ধীর গতির একটি ইনিংস খেলেন তিনি, যা এই ধরনের উইকেটে ২৮৬ রান তাড়ার জন্য যথেষ্ট ছিল না। তিনি পারভেজ হোসেন ইমন (২৮) ও মেহেদী হাসান মিরাজ (২৮)-এর সঙ্গে দুটি মাঝারি জুটি গড়ে দলকে কিছুটা অক্সিজেন দিলেও, নিয়মিত উইকেট পতনের কারণে কোনো সময়েই বাংলাদেশ ম্যাচে ফিরতে পারেনি। জাকের আলি অনিক ২৭ রান করলেও, তা কেবল পরাজয়ের ব্যবধান কমাতেই সাহায্য করে।

শ্রীলঙ্কার পক্ষে আসিথা ফার্নান্দো ও দুশমন্ত চামিরা উভয়েই ৩টি করে উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপের মেরুদণ্ড ভেঙে দেন। দুনিথ ভেল্লালাগে ও ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ২টি করে উইকেট নিয়ে তাদের সফল বোলিং প্রদর্শন করেন।

follow-google-news-provati-barta

ম্যান অব দ্য ম্যাচ ও সিরিজ: কুশল মেন্ডিস দারুণ পারফরম্যান্সের স্বীকৃতিস্বরূপ কুশল মেন্ডিস ম্যাচ সেরা এবং সিরিজ সেরার পুরস্কার লাভ করেন। পুরো সিরিজে তার ব্যাট থেকে আসে ২২৫ রান, যার মধ্যে একটি সেঞ্চুরি ও একটি হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে। তার দায়িত্বশীল ব্যাটিংই মূলত দুই দলের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দিয়েছে।

প্রথম ওয়ানডে হাতছাড়া করার পর দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশ দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু শেষ ম্যাচে বড় মঞ্চে প্রত্যাশার চাপে সাড়া দিতে পারেনি দল। ব্যাটিংয়ের চরম ব্যর্থতা এবং বোলিংয়ের ধারাবাহিকতার অভাবই টাইগারদের হতাশায় ডুবিয়ে দিয়েছে পাল্লেকেলের রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে।

আরও খবর:

বিবিধ