৬ জুলাই ২০২৫, ১১:১৯:২৬
জ্বর-সর্দি-কাশি আর ঋতু পরিবর্তনের অসুখ: আতঙ্ক নয়, চাই সঠিক সতর্কতা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বর্ষার আগমনে প্রকৃতিতে যেমন রোদ-বৃষ্টির খেলা শুরু হয়, তেমনি বাড়তে থাকে জ্বর, সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা, এবং হাত-পা ব্যথাসহ নানা ফ্লু-সদৃশ রোগের প্রকোপ। আবহাওয়ার এই পরিবর্তনে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তবে, চিকিৎসকদের মতে, এসব উপসর্গ মানেই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, কারণ কোভিড-১৯ ছাড়াও সাধারণ ভাইরাল ফ্লু, টাইফয়েড, নিউমোনিয়া বা ডায়রিয়ার কারণেও এমনটা হতে পারে। প্রয়োজন সঠিক সতর্কতা, পরিমিত যত্ন এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি।
সাধারণ সর্দি-জ্বর ও ফ্লু: লক্ষণ ও কারণ
সর্দি-জ্বর পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি হওয়া রোগগুলোর অন্যতম। একজন প্রাপ্তবয়স্কের বছরে ৪ থেকে ৬ বার এবং শিশুর ১০ থেকে ১২ বার সর্দি-জ্বর হওয়া স্বাভাবিক। সর্দি-জ্বরের সাধারণ উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে নাক বন্ধ হওয়া, সর্দি, গলা ব্যথা, মাথাব্যথা, মাংসপেশিতে ব্যথা, কাশি, হাঁচি, জ্বর, কানে ও মুখে চাপ অনুভব করা এবং স্বাদ-ঘ্রাণের অনুভূতি কমে আসা।
ফ্লু এবং সাধারণ সর্দি-কাশির লক্ষণগুলো প্রায় একই রকম হলেও ফ্লুর তীব্রতা বেশি হতে পারে এবং সেরে উঠতে বেশি সময় লাগতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে ফ্লুতে জ্বর, ডায়রিয়া, বমি, কান ব্যথা ও চঞ্চলতা কমে যাওয়া বেশি দেখা যায়। তবে, একটানা কাশি, জ্বর এবং স্বাদ-ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলা কোভিড-১৯ এর লক্ষণও হতে পারে, তাই সতর্ক থাকা জরুরি।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবেন যেভাবে:
সারাবছরই নিজের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন হলেও বর্ষার শুরুতে এর গুরুত্ব বেড়ে যায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কিছু বিষয় মেনে চলা অত্যাবশ্যক:
১. পুষ্টিকর খাবার: ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল (কমলালেবু, পেয়ারা) এবং শাকসবজি (গাজর, লাউ) খাদ্যতালিকায় রাখুন। বর্ষায় পেটের সমস্যা এড়াতে অতিরিক্ত তেল-মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। ২. পর্যাপ্ত তরল গ্রহণ: প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করুন। পাশাপাশি ফলের জুস, চিঁড়া পানি, ডাবের পানি, স্যুপের মতো তরল খাবার শরীরকে সতেজ রাখে এবং পানিশূন্যতা রোধ করে। ৩. প্রাকৃতিক উপাদান: হলুদ, আদা, তুলসি পাতা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। সপ্তাহে কমপক্ষে ২-৩ দিন এগুলো গ্রহণ করতে পারেন। চিকিৎসকের পরামর্শে ভিটামিন ডি, ভিটামিন সি, আয়রনের সাপ্লিমেন্ট নিতে পারেন। ৪. ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা: ভেজা কাপড় পরিহার করুন এবং প্রতিদিন সাবান দিয়ে জামাকাপড় ধুয়ে সরাসরি সূর্যের আলোয় শুকিয়ে নিন। ফোটানো বা বিশুদ্ধ পানি পান করুন। ৫. পর্যাপ্ত ঘুম: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রতিদিন কমপক্ষে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো জরুরি। ৬. শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা: নিয়মিত শরীরচর্চা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। বর্ষায় মানসিক অবসাদ দূর করতে বই পড়া বা গান শোনার মতো কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। ৭. মশার থেকে সুরক্ষা: বর্ষায় মশার প্রকোপ বাড়ে এবং ডেঙ্গুর মতো মশাবাহিত রোগের ঝুঁকি থাকে। তাই অবশ্যই মশারি ব্যবহার করুন।
চিকিৎসা ও সতর্কতা:
সাধারণ সর্দি-কাশি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোনো ওষুধ ছাড়াই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে সেরে যায়। ফ্লু-ও সাধারণত দুই সপ্তাহের মধ্যে আপনা-আপনি ঠিক হয়ে যায়। তবে লক্ষণ উপশমে কিছু ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে:
অ্যান্টিবায়োটিকের ভুল প্রয়োগ নয়: সর্দি-কাশি ও ফ্লু ভাইরাসজনিত রোগ। অ্যান্টিবায়োটিক ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর নয়, বরং এটি ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক সেবন থেকে বিরত থাকুন, কারণ এটি অপ্রয়োজনীয় জটিলতা তৈরি করতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া কোনো ওষুধ, বিশেষ করে অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ দেবেন না।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
সাধারণত বাড়িতে যত্ন নিলেই সর্দি-জ্বর সেরে যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি:
সংক্রমণ প্রতিরোধে করণীয়:
সর্দি-কাশি ও ফ্লু সহজে ছড়াতে পারে। সংক্রমণ প্রতিরোধে কিছু সহজ অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি:
সচেতনতা এবং সঠিক পদক্ষেপের মাধ্যমে ঋতু পরিবর্তনের এই সময়ে আমরা সুস্থ থাকতে পারি এবং গুরুতর জটিলতা এড়াতে পারি। আতঙ্কিত না হয়ে লক্ষণগুলো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করুন এবং প্রয়োজনে সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।