৩ জুলাই ২০২৫, ৮:৪৫:৪৩
জলবায়ু সহনশীলতা ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সুইডেনের ৫০ লাখ ইউএসডি সহায়তায় বিশেষ প্রকল্প হাতে নিচ্ছে বাংলাদেশ
বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা এবং সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে সুইডেন সরকারের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থা (সিডা)-এর অর্থায়নে একটি নতুন ও বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই, ২০২৫) রাজধানীর পরিবেশ অধিদপ্তরে এক অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রকল্পের অনুদান চুক্তি হস্তান্তর করা হয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের হাতে।
অনুদান চুক্তি গ্রহণকালে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “সুইডেন সরকারের সিডার অর্থায়নে গৃহীত এই নতুন প্রকল্পটি বাংলাদেশের জলবায়ু সহনশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি পরিবেশগত ঝুঁকি মোকাবিলা ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।” তিনি আরও জানান, এই প্রকল্পের মাধ্যমে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং বন অধিদপ্তরের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।
৫০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার (প্রায় ৫০ লাখ ইউএস ডলার) ব্যয়ে পরিচালিত এই প্রকল্পটি তিনটি মূল উপাদানের ওপর ভিত্তি করে বাস্তবায়িত হবে:
১. প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি: এর আওতায় জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তৈরি করা হবে উন্নত নজরদারি পরিকল্পনা, পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, এবং বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদীর দূষণ পর্যবেক্ষণের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি সরবরাহ করা হবে।
২. সংকটাপন্ন ও সংরক্ষিত এলাকার পুনরুদ্ধার কার্যক্রম: বিশেষ করে সোনাদিয়া দ্বীপসহ ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া (ইসিএ)গুলোতে তদারকি জোরদার করা হবে। শুরু হবে ম্যানগ্রোভ বন পুনঃস্থাপন, বালিয়াড়ি স্থিতিশীলকরণ, কচ্ছপের প্রজনন কেন্দ্র গঠন এবং প্রাথমিক পরিবেশগত মূল্যায়ন। এসব কার্যক্রমে স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে গঠন করা হবে ‘ভিলেজ কনজারভেশন গ্রুপ’, যারা স্থানীয়ভাবে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কাজ করবে এবং টেকসই জীবনযাপনে সহায়তা করবে।
৩. ‘ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্ট ফান্ড’ গঠন: প্রকল্পের সবচেয়ে উদ্ভাবনী ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো দেশের প্রথম ‘ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্ট ফান্ড’ প্রতিষ্ঠা। একটি বিস্তৃত স্কোপিং স্টাডি ও অংশীজন পরামর্শের ভিত্তিতে গঠিত এই ফান্ড বিপন্ন প্রজাতি সংরক্ষণ এবং মানব-প্রাণী দ্বন্দ্ব হ্রাসে সহায়ক হবে। একই সঙ্গে, এটি সরকারের বাজেটের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে পরিবেশ সংরক্ষণে একটি টেকসই অর্থায়ন কাঠামো তৈরি করবে, যা দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।
এর আগে, অনুদান চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে। সেখানে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব (রুটিন দায়িত্বে) ড. এ. কে. এম. শাহাবুদ্দিন এবং ঢাকাস্থ সুইডেন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ও সহযোগিতা প্রধান মারিয়া স্ট্রিডসম্যান চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
পরিবেশ অধিদপ্তরে আয়োজিত এই অনুদান চুক্তি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. খায়রুল হাসান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. কামরুজ্জামান, প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসেন চৌধুরী, মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব লুবনা ইয়াসমিন, এবং সুইডেন দূতাবাসের সহযোগিতা বিভাগের উপ-প্রধান ও ফার্স্ট সেক্রেটারি নাইওকা মার্টিনেজ ব্যাকস্ট্রম।