৩১ মে ২০২৫, ৩:১৯:০৬
প্রযুক্তি মহারথীদের মতে, মানবদেহ-ঘনিষ্ঠ ডিভাইস এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাই হবে ভবিষ্যতের চালিকাশক্তি, অ্যাপল প্রধানের ভিন্ন মত।
হাতের মুঠোয় থাকা স্মার্টফোন, যা ছাড়া আধুনিক জীবন যেন কল্পনাই করা যায় না, সেই যন্ত্রটির ভবিষ্যৎ নিয়ে উঠেছে বড়সড় প্রশ্ন। প্রযুক্তি বিশ্বের দিকপাল ইলন মাস্ক, মার্ক জাকারবার্গ, ওপেনএআই সিইও স্যাম অল্টম্যান এবং মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের মতো ব্যক্তিত্বরা ইঙ্গিত দিচ্ছেন, স্মার্টফোন শীঘ্রই ইতিহাসের পাতায় চলে যেতে পারে। তাদের মতে, আসছে আরও উন্নত, আরও মানবকেন্দ্রিক প্রযুক্তি। তবে এই ধারণার সঙ্গে পুরোপুরি একমত নন অ্যাপলের সিইও টিম কুক।
প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মধ্যে এই নিয়ে শুরু হয়েছে জোর আলোচনা। স্মার্টফোনের বিকল্প হিসেবে কী আসছে, তা নিয়ে বিভিন্ন জনে বিভিন্ন মত দিচ্ছেন।
মাস্কের মস্তিষ্ক-কম্পিউটার ইন্টারফেস: চিন্তাই হবে আদেশ
স্পেসএক্স ও টেসলার কর্ণধার ইলন মাস্কের সংস্থা নিউরালিঙ্ক ইতিমধ্যেই মানুষের মস্তিষ্কে চিপ স্থাপন করে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণের যুগান্তকারী পরীক্ষা চালিয়েছে। মাস্ক দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, অদূর ভবিষ্যতে স্মার্টফোনের মতো কোনো বাহ্যিক ডিভাইসের প্রয়োজন পড়বে না। মানুষ শুধুমাত্র চিন্তার মাধ্যমেই ডিজিটাল ডিভাইস ও যন্ত্রপাতির সঙ্গে সংযোগ স্থাপন এবং তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে।
বিল গেটসের ‘ইলেকট্রনিক ট্যাটু’: শরীরেই মিলবে স্মার্টফোনের বিকল্প?
মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস এমন এক ‘ইলেকট্রনিক ট্যাটু’ প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করছেন, যা সরাসরি মানবদেহে স্থাপন করা যাবে। এই অত্যাধুনিক ট্যাটু শরীরের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ ও আদানপ্রদান করতে পারবে। অনেকেই মনে করছেন, এটি স্মার্টফোনের একটি কার্যকর বিকল্প হয়ে উঠতে পারে, যা স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ থেকে শুরু করে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবেও কাজ করবে।
জাকারবার্গের অগমেন্টেড রিয়ালিটি: ২০৩০ সালেই নতুন বাস্তবতা?
মেটা (ফেসবুকের মূল সংস্থা) প্রধান মার্ক জাকারবার্গের ভবিষ্যদ্বাণী আরও সুস্পষ্ট। তিনি মনে করেন, ২০৩০ সালের মধ্যেই স্মার্টফোনের স্থান দখল করে নেবে অগমেন্টেড রিয়ালিটি (AR) গ্লাস। জাকারবার্গের ভাষায়, “এই বিশেষ চশমাই হবে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এর মাধ্যমেই মানুষ ভিডিও দেখা, কথা বলা, এমনকি বিভিন্ন ধরনের কাজও সম্পন্ন করবে – তাও আবার হাত ব্যবহার না করেই।”
স্যাম অল্টম্যানের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা: স্মার্টফোন ছাড়াই স্মার্ট জীবন
ওপেনএআই-এর সিইও স্যাম অল্টম্যানের দৃষ্টিভঙ্গি আবার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) কেন্দ্রিক। তিনি মনে করেন, ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি পরিচালিত হবে অত্যন্ত বুদ্ধিমান ব্যক্তিগত এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট বা এজেন্টের মাধ্যমে। এই এআই এজেন্ট মানুষের প্রশ্ন বুঝতে পারবে, প্রাসঙ্গিক তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদন করে দেবে। ফলে, আলাদা করে স্মার্টফোনের প্রয়োজনীয়তাই আর থাকবে না।
অ্যাপলের ভিন্ন সুর: এখনই বিদায় নয় স্মার্টফোনের
তবে এই ধারণার সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেছেন অ্যাপলের সিইও টিম কুক। তিনি মনে করেন, স্মার্টফোন এত সহজে হারিয়ে যাবে না। বরং, নতুন প্রযুক্তিগুলো স্মার্টফোনকে আরও শক্তিশালী এবং ব্যবহারকারী-বান্ধব করে তুলবে। উদাহরণস্বরূপ, অ্যাপলের সদ্য ঘোষিত আইফোন ১৬-তে যুক্ত হওয়া অত্যাধুনিক এআই ফিচারগুলোর কথা উল্লেখ করা যেতে পারে, যা ডিভাইসটিকে আগের চেয়ে অনেক বেশি দক্ষ করে তুলেছে। কুকের মতে, স্মার্টফোন বিবর্তিত হবে, বিলুপ্ত নয়।
প্রযুক্তির দিগন্তে প্রতিদিনই উন্মোচিত হচ্ছে নতুন নতুন সম্ভাবনা। ইলন মাস্ক, জাকারবার্গ, অল্টম্যান ও গেটসের মতো প্রযুক্তিবিদদের ভবিষ্যদ্বাণী যদি সত্যি হয়, তাহলে আমাদের জীবনযাত্রায় আমূল পরিবর্তন আসতে চলেছে। তবে স্মার্টফোন কি সত্যিই বিলুপ্ত হয়ে যাবে, নাকি টিম কুকের কথামতো এটি আরও উন্নত রূপে আমাদের সঙ্গী হয়ে থাকবে – সেই উত্তর ভবিষ্যতে নিহিত। বিশ্ববাসী এখন তাকিয়ে আছে প্রযুক্তির পরবর্তী বিস্ময়ের দিকে।