সারাদেশ

শহীদ পরিবারের পাশে উপদেষ্টা শারমীন: রাষ্ট্রীয় সহায়তা ও ন্যায়বিচারের আশ্বাস

৬ জুলাই ২০২৫, ৭:১১:৫৬

Advisor Sharmeen beside the martyr families: Assurance of state support and justice.
নারায়ণগঞ্জে শহীদ শিশু রিয়া গোপ ও সুমাইয়ার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। ছবি: সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জ, প্রভাতী বার্তা: গত বছরের ঐতিহাসিক জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ পোশাককর্মী সুমাইয়া এবং ছয় বছরের শিশু রিয়া গোপের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানাতে তাদের বাড়িতে গেলেন সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশ ও জাতি যাতে শহীদদের আত্মত্যাগের চেতনাকে ধারণ করতে পারে সেই লক্ষ্যে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে।’ তিনি স্বীকার করেন, ‘বৈষম্যমূলক শাসননীতি আজও বহাল রয়েছে। মব ভায়োলেন্স, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, গুম, খুনসহ সমাজে নানা অবক্ষয় চলছে, যা স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।’ এসব প্রতিকূলতার মাঝেও অন্তর্বর্তী সরকার বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার এবং নারী ও শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ সমাজ পুনর্গঠনের সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। রোববার (৬ জুলাই, ২০২৫) নারায়ণগঞ্জে শহীদের স্বজনদের সাথে সাক্ষাৎ করে তিনি তাদের খোঁজখবর নেন, সান্ত্বনা দেন এবং রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পূর্ণ সহায়তা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতের আশ্বাস দেন।

বেলা সাড়ে ১০টায় নারায়ণগঞ্জ শহরের নয়ামাটি এলাকায় শিশু রিয়া গোপের বাড়িতে পৌঁছান উপদেষ্টা শারমীন মুরশিদ। সেখানে তিনি রিয়ার মা বিউটি ঘোষকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। একমাত্র সন্তান হারানোর বেদনায় কান্নায় ভেঙে পড়েন বিউটি ঘোষ, যা এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা করে। এরপর বেলা সাড়ে ১১টায় সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি নতুন মহল্লায় শহীদ সুমাইয়ার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন উপদেষ্টা, যেখানে তিনি সুমাইয়ার মা আসমা বেগমের সাথে কথা বলেন এবং সুমাইয়ার শিশুকন্যা সোয়াইবের খোঁজ নেন। এ সময় নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) তারেক আল মেহেদী, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় কমিটির আহ্বায়ক নিরব রায়হানসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

শহীদদের প্রতি রাষ্ট্রীয় অঙ্গীকার ও স্মারক:

সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে শারমীন মুরশিদ বলেন, “জুলাই আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, রাষ্ট্র তাদের পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত করতে চায়। আমরা জানতে এসেছি, তাদের পরিবার কেমন আছে, কী সংকটে আছে।” তিনি জানান, মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সুযোগ-সুবিধাগুলো শহীদ পরিবারের কল্যাণে, বিশেষ করে শিশুদের সঠিকভাবে লালনপালন ও তাদের জন্য একটি নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে কীভাবে কাজে লাগানো যায়, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

উপদেষ্টা আরও জানান, জুলাই অভ্যুত্থানে শাহাদাতবরণকারী ১১ জন নারী এবং ১৩৫ জন শিশুর আত্মত্যাগকে জাতি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ রাখবে। মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয় শহীদ ১১ নারীকে নিয়ে একটি গবেষণাধর্মী সংকলন প্রকাশ করবে, যাতে তাদের বীরত্বগাথা ইতিহাসে সংরক্ষিত থাকে। তিনি বলেন, “আমরা আমাদের মেয়েদের হারিয়ে যেতে দেব না… এই ইতিহাসকে সংরক্ষণ করা আমাদের দায়িত্ব।”

শহীদ শিশু রিয়া গোপের নামে একটি স্টেডিয়ামের নামকরণ করা হয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, “ছোট্ট রিয়ার নামে একটি স্টেডিয়াম হয়েছে। সেখানে যখন বাচ্চারা খেলতে যাবে… রিয়ার নামটা থাকবে। তারা যখনই দেখবে, তখনই জিজ্ঞেস করবে—এ নাম কেন দেওয়া হলো? তখনই রিয়ার গল্পটা সবাই জানবে।” তিনি জানান, স্টেডিয়ামে একটি সুন্দর কর্নার থাকবে যেখানে রিয়াসহ অন্যান্য শহীদ শিশুদের জীবনের গল্প লিপিবদ্ধ থাকবে।

উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশ ও জাতি যাতে শহীদদের আত্মত্যাগের চেতনাকে ধারণ করতে পারে সেই লক্ষ্যে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে।’ তিনি স্বীকার করেন, ‘বৈষম্যমূলক শাসননীতি আজও বহাল রয়েছে। মব ভায়োলেন্স, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, গুম, খুনসহ সমাজে নানা অবক্ষয় চলছে, যা স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।’ এসব প্রতিকূলতার মাঝেও অন্তর্বর্তী সরকার বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার এবং নারী ও শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ সমাজ পুনর্গঠনের সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।

আরও খবর:

বিবিধ