আন্তর্জাতিক

লস অ্যাঞ্জেলেসে কারফিউ জারি: অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল শহর

১১ জুন ২০২৫, ১১:২৯:৪৯

Curfew imposed in Los Angeles: City in turmoil over anti-immigration protests
ডাউনটাউন লস অ্যাঞ্জেলেসে কারফিউ জারি করলেন মেয়র

লস অ্যাঞ্জেলেস, ক্যালিফোর্নিয়া: ক্যালিফোর্নিয়াজুড়ে অভিবাসনবিরোধী অভিযানের প্রতিবাদে তীব্র বিক্ষোভের মুখে লস অ্যাঞ্জেলেসের ডাউনটাউনে কারফিউ জারি করা হয়েছে। শহরের মেয়র কারেন ব্যাস জীবন ও সম্পদ রক্ষায় নির্দিষ্ট এলাকায় রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত এই রাত্রিকালীন কারফিউ ঘোষণা করেছেন। এটি প্রায় এক বর্গমাইলজুড়ে ডাউনটাউন এলাকাকে কভার করবে এবং মেয়র ইঙ্গিত দিয়েছেন যে এটি কয়েকদিন স্থায়ী হতে পারে।

লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশের প্রধান জিম ম্যাকডোনেল নিশ্চিত করেছেন যে, গত কয়েকদিন ধরে শহরের বিভিন্ন এলাকায় উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় এবং “অবৈধ ও বিপজ্জনক আচরণ” উদ্বেগজনকভাবে বাড়ায় এই কারফিউ একটি “অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা”। বিক্ষোভকারীদের সহিংসতা, ভাঙচুর, গ্রাফিতি ও লুটপাটের ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মেয়র ব্যাস আরও যোগ করেছেন যে, এই ধরনের কার্যকলাপ অভিবাসীদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে না, বরং শহরকে বিশৃঙ্খল করে তুলছে।

ট্রাম্পের কঠোর মন্তব্য ও সেনা মোতায়েন: ক্যালিফোর্নিয়ার তীব্র প্রতিক্রিয়া

এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্যালিফোর্নিয়ার বিক্ষোভকারীদের “পেশাদার উসকানিদাতা” এবং “জন্তুর” সঙ্গে তুলনা করেছেন। মঙ্গলবার উত্তর ক্যারোলিনার ফোর্ট ব্র্যাগে সেনাবাহিনীর সদস্যদের সামনে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি এই মন্তব্য করেন। ট্রাম্প দাবি করেন, তার সামরিক মোতায়েন ছাড়া লস অ্যাঞ্জেলেস “সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যেত”।

ট্রাম্পের এই মন্তব্য আসে লস অ্যাঞ্জেলেসে মার্কিন মেরিন সেনাদের মোতায়েনের একদিন পরেই। শহরে প্রায় ৪,০০০ ন্যাশনাল গার্ড সদস্য এবং ৭০০ মেরিন সেনাও মোতায়েন করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বেসামরিক অস্থিরতা মোকাবেলায় তিন দশকের মধ্যে এই প্রথম সক্রিয় মেরিন সেনা মোতায়েন করা হলো, যার খরচ আনুমানিক ১৩৪ মিলিয়ন ডলার। পেন্টাগনের নীতিমালা অনুযায়ী সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক নিরপেক্ষ থাকতে বলা হলেও, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।

ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজম এবং লস অ্যাঞ্জেলেসের স্থানীয় নির্বাচিত কর্মকর্তারা ট্রাম্পের এই হস্তক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, ট্রাম্পের পদক্ষেপ পরিস্থিতিকে আরও “উত্তেজিত” করেছে এবং এটি ক্ষমতার অপব্যবহার। গভর্নর নিউজম মঙ্গলবার সান ফ্রান্সিসকোর এক ফেডারেল বিচারকের কাছে একটি জরুরি আবেদন জানিয়েছেন, যাতে ন্যাশনাল গার্ড বা মেরিন সেনাদের আইনশৃঙ্খলা কাজে ব্যবহার রোধ করা যায়। তিনি ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে “অবৈধ, অনৈতিক” এবং “একনায়কসুলভ” আখ্যা দিয়েছেন।

বিক্ষোভের বিস্তার ও আইনি পদক্ষেপ

গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ লস অ্যাঞ্জেলেসের ওয়েস্টলেক ডিস্ট্রিক্ট, ডাউনটাউন এবং দক্ষিণ লস অ্যাঞ্জেলেসের বিভিন্ন এলাকায় অভিবাসন কর্তৃপক্ষের অভিযানের প্রতিক্রিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষে এ পর্যন্ত প্রায় ২০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই বিক্ষোভ শুধু লস অ্যাঞ্জেলেসেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস এবং অস্টিনসহ অন্যান্য মার্কিন শহরেও ছড়িয়ে পড়েছে। ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্য ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে এই সামরিক মোতায়েনকে “অবৈধ” ঘোষণা করে মামলা করারও ঘোষণা দিয়েছে।

আরও খবর:

বিবিধ