৩ জুলাই ২০২৫, ১০:১৯:৪৪
বান্দরবানের রুমা উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ) এবং নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে তীব্র বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় নিহত দুজনের মধ্যে একজন কেএনএ’র শীর্ষ নেতা হতে পারেন বলে ধারণা করছে সেনাবাহিনী। ঘটনাস্থল থেকে বিপুল পরিমাণ অত্যাধুনিক অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই, ২০২৫) সন্ধ্যা ছয়টায় সেনাবাহিনী রুমা জোন সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জোনের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আলমগীর হোসেন এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর অভিযানে বন্দুকযুদ্ধের পর কেএনএ’র গোপন আস্তানা থেকে দুটি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতরা ওই সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্য এবং এর মধ্যে একজন শীর্ষ পর্যায়ের নেতা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, নিহত ব্যক্তিদের নাম-পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করেনি সেনাবাহিনী।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল আলমগীর হোসেন জানান, আজ ভোরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নিরাপত্তা বাহিনী কেএনএ সন্ত্রাসীদের গোপন আস্তানায় অভিযান চালায়। নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে কেএনএ সন্ত্রাসীরা গুলি ছোড়ে। জবাবে নিরাপত্তা বাহিনীও পাল্টা গুলি চালায়। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলা এই বন্দুকযুদ্ধের মুখে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। পরে গোপন আস্তানায় তল্লাশি চালিয়ে দুজন কেএনএ সন্ত্রাসীর মৃতদেহ পাওয়া যায়। এ ছাড়াও, কেএনএ সন্ত্রাসী সন্দেহে একজনকে আটক করা হয়েছে।
উদ্ধারকৃত অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে: দুটি মিয়ানমারে তৈরি এসএমজি,একটি চায়নিজ রাইফেল,৪৫১টি গুলি,আটটি ম্যাগাজিন,দুটি ওয়্যারলেস সেট,তিন সেট সামরিক ইউনিফর্ম,পাঁচ জোড়া বুট জুতা,বাংলাদেশি ১৭ হাজার ৯০০ টাকা,ভারতীয় ৯৫১ রুপি।
স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধিদের তথ্য অনুযায়ী, আজ ভোরে রুমা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত তাইদাংম্রং ঝিরির উজানে নাইতং পাহাড়ের পাদদেশে এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সেখানকার একটি জুমঘরে কেএনএ সন্ত্রাসীরা কয়েক দিন ধরে আস্তানা গেড়েছিল। বান্দরবানে সক্রিয় নতুন সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) দাবি করে কেএনএ তাদের সশস্ত্র শাখা।
বান্দরবানের রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচি এবং রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার দুর্গম অঞ্চলে ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে কেএনএফ সশস্ত্র তৎপরতা শুরু করে। তাদের বিরুদ্ধে সমতলের আনসার আল ইসলাম (আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া) নামের একটি উগ্রবাদী সংগঠনের সদস্যদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। এর প্রেক্ষিতে ২০২২ সালের অক্টোবর মাস থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সমন্বিত অভিযান শুরু করে। এই অভিযানে নিরাপত্তা বাহিনীর সাত সদস্য নিহত হন এবং কেএনএফের বহু সন্ত্রাসী হতাহত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জোন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আলমগীর হোসেন জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় কেএনএফের অত্যাচারে বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে থাকা বম জনগোষ্ঠীর লোকজন নিজ নিজ বাড়িঘরে ফিরে আসতে শুরু করেছেন। এ পর্যন্ত ১২৬টি পরিবার ফিরে এসেছে এবং যারা ফিরে আসছেন, তাদের সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও নিশ্চিত করেন, আজকের এই বন্দুকযুদ্ধ ও সন্ত্রাসী নিহতের ঘটনা বম জনগোষ্ঠীর বাড়িঘরে ফিরে আসার ব্যাপারে কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। নিরাপত্তা বাহিনী সব জনগোষ্ঠীর মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।