অর্থনীতি

বাংলাদেশকে বিশ্বব্যাংকের ২৫ কোটি ডলার ঋণ

১৫ জুন ২০২৫, ১২:৪৭:৩৮

Bangladesh receives a loan of 250 million dollars from the World Bank.
ফাইল ছবি: সংগৃহীত

সুশাসন ও সরকারি সেবার মান বৃদ্ধিতে বাংলাদেশকে ২৫০ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক

ঢাকা, প্রভাতী বার্তা: বাংলাদেশের সরকারি খাতের সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করে কর্মদক্ষতা বাড়াতে ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংক। শনিবার (১৪ জুন) বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এই অর্থায়ন ‘স্ট্রেনদেনিং ইনস্টিটিউশনস ফর ট্রান্সপারেন্সি অ্যান্ড অ্যাকাউন্টেবিলিটি (সিটার) প্রকল্প’-এর আওতায় দেওয়া হয়েছে, যা বাংলাদেশ সরকারের চলমান সংস্কার কর্মসূচিগুলোকে সহায়তা করবে।

প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ও প্রতিষ্ঠানসমূহ:

এই প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য হলো পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বাড়ানো এবং তাদের কার্যক্রমকে আরও আধুনিক ও জনমুখী করা। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো:

  • বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস): পরিসংখ্যান ব্যবস্থাপনার আধুনিকীকরণ।
  • জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর): রাজস্ব আহরণ ও ট্যাক্স ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন।
  • পরিকল্পনা বিভাগ: সরকারি বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বৃদ্ধি।
  • বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি (বিপিপিএ): ক্রয় প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও ই-জিপি’র দ্বিতীয় প্রজন্ম চালু।
  • মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় (সিএজি): আর্থিক তদারকি ও অডিট ব্যবস্থার ডিজিটাল রূপান্তর।

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন এই বিনিয়োগ প্রসঙ্গে বলেন, “এই অর্থায়ন সরকারের ডিজিটাল রূপান্তরকে উৎসাহিত করবে, যা স্বচ্ছতা বাড়িয়ে দুর্নীতির ঝুঁকি কমাবে। একই সঙ্গে জনগণের কাছে সরকারি সেবার গুণমান ও প্রবেশাধিকার উন্নত হবে এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা বাড়বে।” তিনি আরও যোগ করেন, প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে তারা সরকার পরিচালনার স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা বাড়াতে চান, যাতে সরকারি সেবা আরও সহজলভ্য ও বিশ্বাসযোগ্য হয়।

আর্থিক স্থিতিশীলতা ও টেকসই প্রবৃদ্ধি:

প্রকল্পটি ট্যাক্স প্রশাসনকে আধুনিকীকরণের মাধ্যমে করদাতার সংখ্যা বৃদ্ধি ও রাজস্ব আয় বাড়িয়ে আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে। পাশাপাশি, সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা ও জবাবদিহিতা বাড়ানো হবে, যার লক্ষ্য হলো জনগণের অর্থের সর্বোচ্চ সুফল নিশ্চিত করা।

বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ এবং প্রকল্পটির টিম লিডার সুলেমান কুলিবালি বলেন, “একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রকল্প এবং আরও একটি প্রস্তাবিত ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট উভয়ই সরকারকে আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও জনপরিষেবা উন্নয়নে সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যারের সমন্বিত সমর্থন দেবে।”

ভবিষ্যৎ সহযোগিতা:

বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকার আরও একটি ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট নিয়ে আলোচনা করছে, যা এই মাসের শেষ দিকে বিশ্বব্যাংকের বোর্ড সভায় উপস্থাপন করা হবে। এই ঋণ ব্যাংক খাত, কর ব্যবস্থাপনা, সরকারি ব্যয় ও সামাজিক সেবা খাতে আরও স্বচ্ছতা আনতে সহায়তা করবে। সিটার প্রকল্প এই উদ্যোগগুলোর পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে এবং গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলোর বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।

উল্লেখ্য, স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের অন্যতম প্রথম এবং প্রধান উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা হিসেবে কাজ করে আসছে। এখন পর্যন্ত তারা বাংলাদেশে ৪৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি অনুদান ও সহজ শর্তে ঋণ দিয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের কনসেশনাল আইডিএ ঋণের বৃহৎ গ্রহীতাদের অন্যতম হয়ে উঠেছে।

আরও খবর:

বিবিধ