২৮ জুন ২০২৫, ১:০৬:৫৭
সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস এবং গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন এক বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। দেশে প্রথমবারের মতো এই জেলায় সকল বাস ও ট্রাক চালকদের জন্য নিয়োগপত্র প্রদান এবং একটি স্বতন্ত্র ডেটাবেইস তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে। এছাড়া, সকল বাস চালক ও হেলপারদের জন্য পৃথক পোশাকও চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস ও সড়কে শৃঙ্খলা আনয়ন’ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম এই পরিকল্পনার কথা জানান।
পরিবর্তিত পরিবহন ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা:
জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম বলেন, “বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জেলার পরিবহন ব্যবস্থারও পরিবর্তন আনতে হবে। যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থা নিরাপদ করতে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।”
তিনি ফিটনেসবিহীন গাড়ি এবং অবৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্সকে সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। বেশিরভাগ দুর্ঘটনার পর চালকদের পর্যাপ্ত তথ্য না থাকায় অপরাধী শনাক্ত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বেগ পেতে হয়। এই সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যেই জেলার সকল চালকের তথ্যভিত্তিক ডেটাবেইস তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
নিয়োগপত্র ও সামাজিক মর্যাদা:
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, গণপরিবহনের চালক নিয়োগের সময় ড্রাইভিং লাইসেন্স, শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা এবং মাদকাসক্তি পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। তিনি মালিকদের উদ্দেশ্যে জোর দিয়ে বলেন, “আপনার মহা মূল্যবান গাড়িটির নিরাপত্তার জন্য হলেও নিয়োগপত্র দরকার। এছাড়াও, একজন ড্রাইভারের সামাজিক মর্যাদা বাড়বে তার নিয়োগপত্র থাকলে।”
তিনি যোগ করেন, “একজন ড্রাইভার জানেন না তার চালানো গাড়িটি আগামীকাল তিনিই চালানোর সুযোগ পাবেন কি না। অথচ গাড়িটি চালাতে চালাতে সেই গাড়ির প্রতি এক ধরনের মায়াও সৃষ্টি হয় চালকের। এই জন্য ড্রাইভারদের বাধ্যতামূলক নিয়োগপত্র দেওয়া বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করছি আমি।”
শৃঙ্খলা রক্ষায় নতুন বিধি:
চালকের অনুপস্থিতিতে হেলপারদের দিয়ে গাড়ি চালানো বন্ধে আইন প্রয়োগ, চালক ও হেলপারদের জন্য পৃথক পোশাক এবং পরিচয়পত্র চালুর প্রস্তাব দেন জেলা প্রশাসক। তিনি আরও জানান, জেলা প্রশাসন জেলার সব চালকদের জন্য নামমাত্র খরচে নিয়মিত ডোপ টেস্টের ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সেলিম জেলা প্রশাসকের এই উদ্যোগগুলোকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “জেলা প্রশাসকের উদ্যোগগুলো সফল হলে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।”
সভায় জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়, সিভিল সার্জন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের প্রতিনিধি এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এই উদ্যোগগুলো নারায়ণগঞ্জের সড়ক পরিবহন খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে বলে আশা করা হচ্ছে।