১৪ জুলাই ২০২৫, ১০:৪৪:০৮
২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের আত্মত্যাগের স্মরণে দেশের প্রথম ‘জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’ নারায়ণগঞ্জের হাজীগঞ্জ এলাকায় উদ্বোধন করা হয়েছে। সোমবার (১৪ জুলাই) বিকেলে অন্তর্বর্তী সরকারের পাঁচজন উপদেষ্টা এই স্মৃতিস্তম্ভের ফলক উন্মোচন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপদেষ্টারা জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হয়। এই আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জ ছিল অন্যতম কেন্দ্র, যেখানে পুলিশের গুলিতে অন্তত ২২ জন তরুণ (পরে ফলকে ২১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়) শহীদ হন এবং সাড়ে তিন শতাধিক মানুষ আহত হন। অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম ঘোষণা ছিল জুলাই শহীদদের স্মরণে প্রতিটি বিভাগ ও জেলা শহরে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ। ভয়াবহ দমনপীড়নের শিকার হওয়ায় নারায়ণগঞ্জকে প্রথম স্থান হিসেবে বেছে নেওয়া হয়।
আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, “আমাদের লোকদের এমনভাবে হত্যা করা হলো, অঙ্গহানি করা হলো, এর বিচার কোথায়? আমি আপনাদের দৃঢ়ভাবে জানাতে চাই, বিচার এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের শাসনামলেই এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে।” তিনি আরও জানান, ৫ আগস্টের আগেই অনেক মামলার অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শিল্প ও গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, এই স্মৃতিস্তম্ভ ‘স্বৈরাচারের ঠিকানা’ হবে এবং ফ্যাসিবাদ কীভাবে অত্যাচার করতো, তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দেখানোর জন্য এটি সংরক্ষণ করা হবে। গণভবনেও একটি ‘ফ্যাসিস্ট জাদুঘর’ গড়ে তোলার কাজ চলছে, যা ৫ আগস্টের মধ্যেই উদ্বোধন করা হবে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, শহীদরা উদ্দেশ্যহীনভাবে প্রাণ দেননি; তাদের লক্ষ্য ছিল বৈষম্যবিহীন বাংলাদেশ গড়া। তিনি জোর দিয়ে বলেন, শহীদদের সম্মান জানানোর অন্যতম উপায় হলো স্বৈরাচারের বিচার নিশ্চিত করা এবং এই বিচার প্রক্রিয়া স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে যেন দেশের কোনো বাহিনী নিজ দেশের মানুষের ওপর গুলি চালাতে না পারে, সেই নিশ্চয়তা দিতে হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, শিল্প এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান, গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব মো. নজরুল ইসলাম, ঢাকা বিভাগের কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী ও নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা, রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
উপদেষ্টারা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সহমর্মিতা প্রকাশ করেন। এরপর শহীদদের স্মৃতিতে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষ হয়।