৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২:২৪:২৩
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬ বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে বহু প্রতীক্ষিত ডাকসু নির্বাচন। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ। ভিপি, জিএসসহ মোট ৪১টি পদের জন্য লড়ছেন প্রার্থীরা। নির্বাচন কেন্দ্র করে ডিএমপির কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও বিশেষ নির্দেশনা।
অবশেষে সব অপেক্ষার অবসান! দীর্ঘ ছয় বছরের জল্পনা-কল্পনার পর আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে ভোট চলবে একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত। আগামী এক বছরের জন্য কে হবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নেতা, সেই উত্তর মিলবে আজকের ব্যালট যুদ্ধে।
ভোটারদের আগ্রহ ও হাড্ডাহাড্ডি লড়াই
২৮ বছর পর ২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও এরপর আর নির্বাচন হয়নি। দীর্ঘ বিরতির পর এই নির্বাচনকে ঘিরে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ও ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। এবারের ডাকসু নির্বাচনে ২৮টি পদে ৪৭০ জন এবং ১৮টি হল সংসদের ২৩৪টি পদে ১ হাজার ১০৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মোট ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন ভোটার ৮টি কেন্দ্রের ৮১০টি বুথে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন।
শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সরব থাকা প্রার্থীদের প্রতিই ভোটারদের সমর্থন থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। এবারের নির্বাচনে সহসভাপতি (ভিপি) ও জিএস পদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। ভিপি পদে মূলত জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির ও স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্যের প্যানেল থেকেই মূল লড়াই হবে।
নির্বাচনী নিরাপত্তা ও বিশেষ নির্দেশনা
ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথগুলোতে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানিয়েছেন, পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া সিসি ক্যামেরায় মনিটর করা হচ্ছে। এই মুহূর্তে ১ হাজার ৭৭৬ জন পুলিশ সদস্য এবং আগামীকাল (মঙ্গলবার) ২ হাজার ৯৬ জন সদস্য নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন। এছাড়াও র্যাব, বিজিবি ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও মাঠে রয়েছেন।
ডিএমপির বিশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী, নির্বাচন চলাকালীন ৮ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের লাইসেন্সধারী অস্ত্র বহন করা যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশদ্বারগুলো সর্বসাধারণের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধ পরিচয়পত্রধারী শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং জরুরি সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা প্রবেশ করতে পারবেন।
অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ভোট ও ফলাফল
তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৫৭ শতাংশ ছাত্রী ও ৩৪ শতাংশ ছাত্র অনাবাসিক। তাঁদের ভোট এই নির্বাচনের ফলাফলে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। যদিও অনাবাসিক নারী শিক্ষার্থীদের ভোট প্রদানের আগ্রহ তুলনামূলক কম, তবে প্রার্থীরা মনে করছেন এবারের প্রচারণার কারণে তাঁদের অংশগ্রহণ বাড়বে। যদি ৯০ শতাংশের বেশি ভোট কাস্ট হয়, তবে নির্বাচনের সব পূর্ববর্তী সমীকরণ বদলে যাবে।
আজ বিকাল ৪টায় ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর প্রতিটি কেন্দ্রে আলাদাভাবে ফলাফল প্রকাশ করা হবে। চূড়ান্ত ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে হতে পারে মধ্যরাত পর্যন্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন শিক্ষার্থীদেরকে কোনো ধরনের গুজবে কান না দিয়ে ভোট কেন্দ্রে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
মেট্রোরেল ও শাটল সার্ভিসের তথ্য
শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশেষ চক্রাকার শাটল সার্ভিস চালু করেছে। অন্যদিকে, মেট্রো কর্তৃপক্ষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনটি সম্পূর্ণ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।