আন্তর্জাতিক

ট্রাম্পের ঘোষণা: গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে ইসরায়েল রাজি

২ জুলাই ২০২৫, ৮:০৬:৫৮

Trump's announcement: Israel agrees to a 60-day ceasefire in Gaza.
ছ‌বি: সংগৃহীত

গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির শর্তে ইসরায়েল রাজি: ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণা, হামাসের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় বিশ্ব

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় দীর্ঘ প্রতীক্ষিত একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকরে নতুন মোড় নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, গাজায় ৬০ দিনের একটি যুদ্ধবিরতি চূড়ান্ত করার জন্য ইসরায়েল ‘প্রয়োজনীয় শর্তাবলি’ মেনে নিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (১ জুলাই, ২০২৫) নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এই চাঞ্চল্যকর ঘোষণা দেন।

ট্রাম্প তার পোস্টে লেখেন, “যুদ্ধের অবসান ঘটাতে আমরা সব পক্ষের সঙ্গে কাজ করব।” তবে, প্রস্তাবিত চুক্তির সুনির্দিষ্ট শর্তগুলো সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি। তিনি আরও উল্লেখ করেন, শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাতার ও মিসরবাসী ‘কঠোর পরিশ্রম করেছেন’ এবং তারাই চূড়ান্ত চুক্তির প্রস্তাব দেবেন। ট্রাম্প হামাসের প্রতি এই চুক্তি গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছেন, কারণ তার মতে, “এটি আর ভালো হবে না; বরং এটি শুধু আরও খারাপ হতে পারে।”

সংঘাতের প্রেক্ষাপট ও মানবিক বিপর্যয়:

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস ইসরায়েলে আক্রমণ চালালে এই সংঘাতের সূত্রপাত হয়। ইসরায়েলের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ওই হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষ নিহত হন এবং দুই শতাধিক মানুষকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। এর জবাবে সেদিন থেকেই ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী অবরুদ্ধ গাজায় ভয়াবহ তাণ্ডব শুরু করে। প্রায় ৯ মাস ধরে চলমান নির্বিচার ইসরায়েলি হামলায় উপত্যকাটিতে ৫৬ হাজার ৬০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন এবং আহত মানুষের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে গেছে, যা এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে।

অপেক্ষায় হামাস ও ইসরায়েলের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া:

যুদ্ধবিরতি কার্যকরে কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘ সময় ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ট্রাম্পের গতকালের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে হামাস যুদ্ধবিরতির শর্ত মেনে নিয়েছে কি না, তা প্রাথমিকভাবে জানা যায়নি। ইসরায়েলের তরফেও এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ট্রাম্প মঙ্গলবার হামাসকে এই ‘চূড়ান্ত প্রস্তাব’ মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, যা কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতাকারীরা পাঠাবে।

নেতৃবৃন্দের বৈঠক ও বিপরীতমুখী অবস্থান:

আগামী সপ্তাহে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর একটি বৈঠকের কথা রয়েছে। এর আগেই ট্রাম্প এই ঘোষণা দিলেন এবং বলেছেন যে তিনি ‘খুব দৃঢ়’ থাকবেন। মঙ্গলবার ইসরায়েলের কৌশলগত বিষয়ক মন্ত্রী রন ডার্মারসহ দেশটির কর্মকর্তারা ওয়াশিংটন ডিসিতে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা ছিল।

গত সপ্তাহে হামাসের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছিলেন, গাজায় একটি নতুন অস্ত্রবিরতি ও জিম্মি মুক্তির চুক্তির ব্যবস্থা করতে মধ্যস্থতাকারীরা তৎপরতা বাড়ালেও ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনা স্থবির হয়ে আছে। ইসরায়েল বারবার বলছে, এই সংঘাত তখনই বন্ধ হবে যখন হামাসকে পুরোপুরি নির্মূল করা হবে। অন্যদিকে, হামাস দীর্ঘদিন ধরে একটি স্থায়ী অস্ত্রবিরতি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে আসছে।

বর্তমানে প্রায় ৫০ জন ইসরায়েলি জিম্মি গাজায় রয়েছেন বলে ধারণা করা হয়, যার মধ্যে অন্তত ২০ জন এখনও জীবিত আছেন বলে বিশ্বাস করা হচ্ছে। ট্রাম্পের এই ঘোষণা গাজা সংকট নিরসনে একটি নতুন আশার সঞ্চার করলেও, উভয় পক্ষের আনুষ্ঠানিক সম্মতি এবং মূল দাবি-দাওয়ার মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতি অনিশ্চিতই রয়ে যাচ্ছে।

আরও খবর:

বিবিধ