১৪ জুন ২০২৫, ১১:৫৭:১৯
প্রভাতী বার্তা ডেস্ক: দেশে আবারও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে শুরু করলেও আগামী ২৬ জুন থেকে শুরু হতে যাওয়া এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা পেছানোর কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। যদিও সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় শিক্ষক-অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে, তবে আন্তঃশিক্ষা সমন্বয় বোর্ড এবং বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা জানিয়েছেন, পরীক্ষা নির্ধারিত সময়েই শুরু হবে এবং এর জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দোকার এহসানুল কবির শনিবার (১৪ জুন, ২০২৫) জানান, “এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা পেছানোর কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই।” তিনি আরও বলেন, “করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়লেও কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেবে। পরীক্ষার্থীদের মাস্ক পরা, হাত ধোয়া ইত্যাদি বিষয়গুলো তদারক করা হবে।” তার মতে, পরীক্ষা আয়োজনের সব প্রস্তুতি শেষ এবং যথাসময়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সরকার ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনাগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এসএম কামাল উদ্দিন হায়দারও একই কথা বলেছেন। তিনি জানান, “আমরা যথাসময়ে পরীক্ষা গ্রহণের সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। এখন পর্যন্ত পরীক্ষা নির্ধারিত সময়ে গ্রহণের সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে।” তবে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন এবং ঈদের ছুটির পর রোববার আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিঞা মো. নূরুল হক এবং বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. রুহুল আমিনও নিশ্চিত করেছেন যে, তাদের নিজ নিজ বোর্ডের আলিম ও কারিগরি পরীক্ষার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। তারা উল্লেখ করেন, যদি করোনা বা ডেঙ্গুর প্রকোপ মহামারি আকারে ধারণ করে, তবে পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) তথ্যমতে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে শনিবার (১৪ জুন) পর্যন্ত সারা দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২৪৭ জন এবং মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। এর মধ্যে গত কয়েক দিনে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে ২ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অন্যদিকে, একই সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৭৩৯ জন এবং মারা গেছেন ২৯ জন। ডেঙ্গুর পাশাপাশি করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা গত ৪ জুন জারি করা নির্দেশনায় সংক্রমণ প্রতিরোধে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, মাস্ক ব্যবহার, আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে ৩ ফুট দূরে থাকা, অপরিষ্কার হাতে নাক-চোখ-মুখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকা এবং হাঁচি-কাশির সময় নাক-মুখ ঢেকে রাখার পরামর্শ দিয়েছে।
এ বছর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় মোট ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবে। এর মধ্যে ছাত্র ৬ লাখ ১৮ হাজার ১৫ জন এবং ছাত্রী ৬ লাখ ৩৩ হাজার ৯৬ জন। সারা দেশে মোট ২ হাজার ৭৯৭টি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তত্ত্বীয় পরীক্ষা ১০ আগস্ট শেষ হবে এবং ব্যবহারিক পরীক্ষা ১১ থেকে ২১ আগস্ট পর্যন্ত চলবে।
পরীক্ষা নিয়ে একাধিক শিক্ষক উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, নিজের কলেজে কেন্দ্র থাকায় ডিউটি করতে হবে এবং ডেঙ্গু ও করোনা বেড়ে যাওয়ায় নিজেদের ও পরীক্ষার্থীদের সুরক্ষা নিয়ে তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। পরীক্ষার সময় ভিড়ের কারণে স্বাস্থ্যবিধি মানা কঠিন হতে পারে বলেও তারা আশঙ্কা করছেন।
অন্যদিকে, অভিভাবকরা কেন্দ্র সংখ্যা বাড়িয়ে দ্রুত পরীক্ষা শেষ করার দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, সন্তানরা পরীক্ষার পুরো সিলেবাস শেষ করেছে এবং পরীক্ষা পেছানো তাদের জন্য আরও দুশ্চিন্তার কারণ হবে।