১৫ জুন ২০২৫, ৩:০২:১০
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, প্রভাতী বার্তা: ইসরায়েলের হামলার প্রতিক্রিয়ায় বিশ্ব বাণিজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পথ হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দিয়েছে ইরান। দেশটির সশস্ত্র বাহিনী এক বার্তায় জানিয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই কৌশলগত জলপথ দিয়ে কোনো জাহাজ চলাচল করতে পারবে না। এই সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্ববাজারে তেলের দামে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়েছে, যা বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য এক বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
হরমুজ প্রণালি পারস্য উপসাগরকে ওমান উপসাগরের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে এবং ইরান ও ওমানের মাঝে অবস্থিত। এটি বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগতভাবে সংবেদনশীল সমুদ্রপথ। প্রণালিটির সবচেয়ে সংকীর্ণ অংশ মাত্র ৩৯ কিলোমিটার প্রশস্ত, যার দুটি সংকীর্ণ চ্যানেল দিয়ে বড় জাহাজ চলাচল করে। প্রতিদিন সমুদ্রপথে পরিবাহিত মোট তেলের প্রায় ২০ শতাংশ এই পথ দিয়ে যাতায়াত করে, যা এটিকে বৈশ্বিক জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থার মেরুদণ্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে।
ইরানের সশস্ত্র বাহিনী তাদের এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে এক কঠোর বার্তায় ঘোষণা করেছে: “আমরা হজরত আল আব্বাস (আ.)-এর অনুসারী, আমাদের অনুমতি ছাড়া একটি মাছিও আমাদের জলসীমা অতিক্রম করতে পারবে না!” অন্য একটি পোস্টে তারা পশ্চিমা দেশগুলোর সমালোচনা করে বলেছে, “তারা কোথায়, যারা বলেছিল তারা ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র থামাবে এবং ইসরায়েলকে রক্ষা করবে? এখন বিশ্ব দেখতে পাবে কে আসল মধ্যপ্রাচ্যের সিংহ!” এই ঘোষণায় স্পষ্ট হয়েছে যে, ইরান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আরও জোরদার করবে এবং হরমুজ প্রণালিকে কৌশলগতভাবে ব্যবহার করবে।
হরমুজ প্রণালি দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। ইরান প্রায়শই এই প্রণালিকে একটি কৌশলগত চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা বা সামরিক হুমকির জবাবে ইরান অতীতেও একাধিকবার হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে, যা গোটা বিশ্বের জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থায় চরম বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা বারবার এই প্রণালির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাদের নৌবাহিনী মোতায়েন করেছে।
ইরানের এই আকস্মিক পদক্ষেপে বৈশ্বিক তেল ও গ্যাসের বাজারে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। তেল বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত বিশ্ব অর্থনীতির উপর সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।