১৪ জুন ২০২৫, ২:২৬:৪৪
প্রভাতী বার্তা,আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মধ্যপ্রাচ্যে পূর্ণাঙ্গ সংঘাতের আশঙ্কা তীব্র করে শুক্রবার রাতে দখলদার ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিবসহ বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে দুই শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। এই হামলার তীব্রতার মধ্যেই ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দফতরের পাশ থেকে আগুনের শিখা দেখা গেছে, যা পরিস্থিতিকে আরও উদ্বেগজনক করে তুলেছে। ইসরায়েলি গণমাধ্যম চ্যানেল ১৩ এই খবর নিশ্চিত করেছে।
ইসরায়েল হাওম নামের আরেকটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র অন্তত মধ্য ইসরায়েলের সাতটি স্থানে আঘাত হেনেছে। রয়টার্সকে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তেল আবিব শহরে একের পর এক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে, যা শহরের সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলো শনাক্ত করেছে এবং সেগুলোকে লক্ষ্যভ্রষ্ট করার জন্য কাজ চলছে।
প্রবল প্রতিশোধের প্রেক্ষাপট: ইসরায়েলের ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’
ইরানের এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা আকস্মিক নয়, বরং ইসরায়েলের ধারাবাহিক আগ্রাসনের সরাসরি পাল্টা জবাব। শুক্রবার ভোরেই ইসরায়েল ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামের এক বিধ্বংসী অভিযান চালিয়ে ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছিল। ইসরায়েলি ২০০ যুদ্ধবিমানের এই হামলায় ইরানের সামরিক বাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এই হামলায় ইরানের সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি, আইআরজিসির প্রধান কমান্ডার মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি এবং আইআরজিসির বিমানবাহিনীর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমির আলী হাজিজাদেহ-সহ অন্তত ২০ জন উচ্চপদস্থ ইরানি কমান্ডার নিহত হন। সব মিলিয়ে এই হামলায় অন্তত ৭৮ জনের প্রাণহানি এবং তিন শতাধিক ব্যক্তি আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।
তবে এখানেই শেষ নয়। প্রথম হামলার রেশ কাটতে না কাটতেই, প্রায় ১২ ঘণ্টা পর, শুক্রবার সন্ধ্যায় ইসরায়েল আবারও নতুন করে ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে দ্বিতীয় দফা হামলা চালায়। এই ক্রমাগত আগ্রাসনের জবাবেই তেহরান ইসরায়েলি ভূখণ্ড লক্ষ্য করে ঝাঁকে ঝাঁকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে প্রতিশোধ নিতে শুরু করে।
আঞ্চলিক সংঘাতের চরম মুহূর্ত: আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে এই সামরিক সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতাকে চরম ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পাল্টাপাল্টি হামলা একটি সর্বাত্মক আঞ্চলিক যুদ্ধের সূচনা করতে পারে, যার ভয়াবহ পরিণতি বিশ্বজুড়ে অনুভূত হবে। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক মহল দ্রুত পরিস্থিতি শান্ত করার এবং উভয় পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
ইতিমধ্যে, বৈশ্বিক তেলের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, যা এই সংঘাতের অর্থনৈতিক প্রভাবের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ইরান ও ইসরায়েলের এই সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক দৃশ্যপটকে এমন এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিয়েছে, যার প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে পারে। পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, তা জানতে এখন অপেক্ষা বৈশ্বিক পর্যবেক্ষকদের।