১ জুন ২০২৫, ৬:০১:১৭
কুড়িগ্রাম, নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের আকাশসীমায় ভারতীয় ড্রোনের অনুপ্রবেশের ঘটনা আবারও ঘটেছে। গত শুক্রবার (৩০ মে) রাত ৮টার দিকে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার বড়াইবাড়ী সীমান্তে প্রায় আধঘণ্টা ধরে চারটি ভারতীয় ড্রোন বাংলাদেশের ৫০০ মিটার অভ্যন্তরে চক্কর দিয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এবং সীমান্ত পরিস্থিতি নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
জামালপুর বিজিবি ৩৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাসানুর রহমান একটি ক্ষুদে বার্তায় এ তথ্য নিশ্চিত করলেও, এ বিষয়ে বিজিবির পক্ষ থেকে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ভারতের আসাম রাজ্যের কাকড়িপাড়া বিএসএফ ক্যাম্পের আওতাধীন বিএসএফ সদস্যরা এই ড্রোনগুলো পাঠিয়েছে। রৌমারী উপজেলার বড়াইবাড়ী ও বারবান্দা গ্রামের আকাশে ড্রোনগুলো প্রায় ৩০ মিনিট ধরে উড়ছিল। তাদের ধারণা, বিএসএফ নজরদারি করতে এবং বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে ভীতি ছড়াতে এসব ড্রোন ব্যবহার করছে। এর আগে গত ২৭ মে একই সীমান্তে ভারতীয় ড্রোন উড়তে দেখা গিয়েছিল।
বিজিবি সূত্র জানায়, শুক্রবার রাত সোয়া ৮টা থেকে পৌনে ৯টা পর্যন্ত আন্তর্জাতিক পিলার ১০৬৭ (১ এস)-এর কাছে বাংলাদেশের ৫০০ মিটার অভ্যন্তরে এই ড্রোনগুলো চক্কর দেয়। এ বিষয়ে বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা ড্রোন ওড়ানোর বিষয়টি অস্বীকার করে। বিজিবি সূত্র আরও জানায়, বিএসএফ ছাড়া অন্য কারো পক্ষে সীমান্তের ২০০ গজের মধ্যে এসব ড্রোন ওড়ানো সম্ভব নয়, কারণ ওই এলাকায় তাদের কড়া নজরদারি থাকে। তা সত্ত্বেও বিএসএফ দায় স্বীকার করছে না।
রৌমারী সদর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফিরোজ মিয়া এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, গত ২৭ মে ১৪ জন ভারতীয় নাগরিককে বিএসএফ কর্তৃক ‘পুশ ইন’ করার পর থেকেই ভারত বিভিন্নভাবে বাংলাদেশে নজরদারি করার চেষ্টা করছে। তিনি ভারতের এমন আচরণকে বৈরী উল্লেখ করে রাষ্ট্রীয়ভাবে এর প্রতিকার দাবি করেছেন।
এদিকে, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, বৈধ অনুমতি ছাড়া কোনো রাষ্ট্র অন্য কোনো রাষ্ট্রের জল, স্থল কিংবা আকাশসীমা ব্যবহার করতে পারে না। এটি আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তিনি আরও বলেন, সীমান্তে অস্ত্র বা প্রযুক্তি ব্যবহারে জাতিসংঘের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে এবং ভারত বাংলাদেশের আকাশসীমায় এভাবে ড্রোন ওড়াতে পারে না। এটি আন্তর্জাতিক আইন, মানবাধিকার ও দ্বিপক্ষীয় চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তিনি ভারতের এই অপতৎপরতা বন্ধে বাংলাদেশ সরকারকে কূটনৈতিক যোগাযোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি অকাট্য প্রমাণ সংগ্রহ করে প্রয়োজনে জাতিসংঘে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।