বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি

বুড়ো আঙুলের জন্য নকশা!

২৬ মে ২০২৫, ১১:২৬:৫৯

সফটওয়্যাল ডেভেলপমেন্টে অন্যতম প্রধান গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, ব্যবহারকারী পণ্যটির বিভিন্ন ইন্টারফেসকে কীভাবে ব্যবহার করছে বা করবে তার সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখা। প্রথম দিকে ব্যাপারটিকে বলা হতো ব্যবহার বান্ধব (user friendly) কিনা। তারও আগে ইনপুট দেয়া নেয়ার ব্যাপারটি ছিল পাঞ্চ কার্ড ব্যবহার করে। এরপর মেকানিক্যাল কিবোর্ড ইত্যাদি নানান ধাপ পেরিয়েছে। দ্বিতীয় ছবিটিতে দেখুন ২০০০ সালের আগের উইন্ডোজ এনটি এর একটি সার্চ ইঞ্জিনের ওয়েবসাইটের ইন্টারফেস‌!

যাহোক গত অন্তত দুই দশক ধরে ইনপুট এবং আউটপুট পদ্ধতির ব্যাপক উন্নয়ন সাধনের কারণে ব্যবহারকারীর জন্য আরও সহায়ক করতে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টে UI/UX বলে একটি শব্দবন্ধ ব্যবহৃত হয়। এর মানে হলো ইউজার ইন্টারফেস ও ইউজার এক্সপেরিয়েন্স। অর্থাৎ ব্যবহার কারীর ইন্টারফেস যথেষ্ট সহায়ক কিনা, ব্যবহার করতে কোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতি হয় কিনা। এবং ইউজার এক্সপেরিয়েন্স হলো, বাস্তবে ইন্টারফেসটি কতটা কার্যকরভাবে ইপ্সিত কাজটি সম্পাদন করতে সবচেয়ে সহজ একটা অভিজ্ঞতা দিচ্ছে ব্যবহারকারীকে।

এখানে প্রথম চিত্রে দেখুন একটি মোবাইল স্ক্রিনের বিভিন্ন জোন, সচরাচর আমরা তো এক হাতেই মোবাইল রেখে ব্যবহার করি। তাতে মূলত বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে সব ইনপুট দেয়া হয়। কখনো এক হাতে রেখে অন্য হাতের ব্যবহার, যেমন ছবি বড় করে দেখতে বাম হাতে রেখে ডান হাতের দু আঙুলে প্রসারিত করা। আবার কখনো দুই হাত একই সঙ্গে ব্যবহার করা হয় (যেমন পাবজি, ফ্রিফায়ার গেম খেলার সময়)।

তবে, একটি অ্যাপ বা সফটওয়্যারের বিভিন্ন ইন্টারফেস ডিজাইনের সময়ে অনেক কিছু মাথায় রাখা হয়। চিন্তা করতে পারেন দ্বিতীয় ছবির সার্চ ইঞ্জিনে কীভাবে সার্চ করা হত? ঠকাং ঠকাং শব্দে ছোট্ট ঐ সার্চ বাক্সে কিছু টেক্সট লেখা হত। তারপর ঠকাং করে এন্টার/রিটার্ন চাপ দেয়া হত। পরে জাভাস্ক্রিপ্ট আর অ্যাজাক্স আসায় আপনার প্রতিটি অক্ষর প্রবেশের সাথে সাথে সাজেশন আসতে থাকল। ওয়েবসাইটও নির্জীব নয় এখন। আপনি কোন লোকেশনে আছেন, সেই তথ্য নিয়ে আপনাকে সময় এবং অবস্থান অনুযায়ী তথ্য সরবরাহ করবে। যেমন আপনি লিখবেন good eats nearby তাতে আপনার কাছের খাওয়া-দাওয়ার জায়গাগুলো দেখিয়ে দেবে।

মোবাইল অ্যাপের ক্ষেত্রে অ্যাপটি কোনভাবে ব্যবহৃত হবে সেটি ইঞ্জিনিয়ার এবং ডিজাইনারগণ বিবেচনায় নেন। এখানে দেখানো হয়েছে, ব্যবহারকারী স্ক্রিনের সবুজ অংশে সচরাচর আঙুল নাড়াবে। হলুদ অংশে করতে পারবে তবে আঙুল অনেক স্ট্রেচ করতে হবে। লাল অংশে মোবাইল অন্য হাতে নেয়া বা কোথাও রেখে ব্যবহার ছাড়া অসম্ভব। তাহলে মোবাইলে যে অ্যাপ থাকবে, তার সচরাচর ব্যবহার্য ইন্টার‍্যাকশনগুলো তাহলে সবুজ জোনের মধ্যেই থাকা বাঞ্ছনীয় তাই না?

বুড়ো আঙুলের জন্য নকশা (Designing for thumbs)

ব্যবহারকারীরা কীভাবে তাদের ফোন ধরে:

– ৪৯% এক হাতে ব্যবহার করে

– ৩৬% ফোন ধরে রাখে (এক হাতে রেখে, অন্য হাত দিয়ে ইন্টারঅ্যাক্ট করে)

– ১৫% দুই হাত ব্যবহার করে

মোবাইল ইন্টারফেস ডিজাইন করার ক্ষেত্রে এটি বিশাল পার্থক্য তৈরি করে। যদি মূল কাজগুলো আঙুলের সহজে নাগালের মধ্যে না থাকে, তবে আমরা অপ্রয়োজনীয় অসুবিধা তৈরি করি।

এখানে থাম্ব জোনের একটি সহজ ব্যাখ্যা দেওয়া হলো:

স্বাচ্ছন্দ্য জোন (Comfort zone) – অনায়াসে, স্বাভাবিক অ্যাক্সেস

প্রসারণ জোন (Stretch zone) – নাগালের মধ্যে, তবে প্রচেষ্টার প্রয়োজন হয়

ঝুঁকি জোন (Risk zone) – চাপতে বেমানান বা অসুবিধাজনক

যদি আপনার প্রাথমিক কাজগুলো লাল জোনে থাকে — তবে আপনার ডিজাইন সম্ভবত বিরক্তির কারণ হচ্ছে।

একটি দুর্দান্ত মোবাইল UX (ইউজার এক্সপেরিয়েন্স) কেবল পরিচ্ছন্ন নয় — তা আরামদায়ক।

উন্নত অ্যাপগুলোতে সর্বদা প্রাথমিক কাজগুলো সবুজ জোনে রাখা হয় — বিশেষ করে নেভিগেশন, CTA (কল-টু-অ্যাকশন), এবং মূল জেসচারগুলো। এখানে ছোটখাটো পরিবর্তন ব্যবহারযোগ্যতায় বড় পার্থক্য তৈরি করে।

আরও খবর:

বিবিধ