২১ জুলাই ২০২৫, ২:৫৫:৪৮
আগামী ১লা আগস্ট থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর সম্ভাব্য ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা নিয়ে যখন ব্যবসায়িক মহলে জল্পনা-কল্পনা চলছে, তখন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আশার বাণী শুনিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এই বিষয়ে এখনই উদ্বেগের কোনো কারণ নেই, কারণ পাল্টা শুল্ক কমাতে সরকার সব ধরনের চেষ্টা চালাচ্ছে এবং আলোচনা চলছে।
রোববার (২০ জুলাই ২০২৪) ঢাকার বনানীর হোটেল শেরাটনে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচেম) আয়োজিত টেকসই বিনিয়োগ বিষয়ক এক নীতি সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “আলোচনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে বারবার কথা বলে উদ্বেগ তৈরির দরকার নেই। সরকার যা যা করার, সবকিছুই করছে।”
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও রপ্তানি বাজার নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই সংলাপে জ্বালানি, পোশাক ও তামাক খাত নিয়ে পৃথক উপস্থাপনা দেওয়া হয়। পোশাক খাতের টেকসই বিনিয়োগ নিয়ে কথা বলেন রিকভারি গ্রুপের প্রধান রূপান্তর কর্মকর্তা ফাহমি মুহসিন। তামাক খাতের টেকসই বিনিয়োগ উপস্থাপন করেন ফিলিপ মরিস গ্রুপের দেশীয় ব্যবস্থাপক রেজওয়ানুর রহমান মাহমুদ, এবং জ্বালানি খাতের টেকসই বিনিয়োগ বিষয়ে তথ্য তুলে ধরেন শেভরন বাংলাদেশের পরিচালক ইমরুল কবির।
প্রশ্নোত্তর পর্বে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান মনে করিয়ে দেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পরেও পোশাক খাত ধ্বংস হয়ে যাবে বলা হয়েছিল, কিন্তু সরকার ও ব্যবসায়ীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই খাত ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, “একসঙ্গে চললে সব বাধা দূর হবে।”
টেকসই জীবনযাপন ও সবুজ শিল্পায়নে বাংলাদেশের অঙ্গীকার
উপদেষ্টা টেকসই বিনিয়োগের বিশ্বজনীন ধারণার ওপর জোর দিয়ে বলেন যে, যারা পরিবেশ দূষণের জন্য বেশি দায়ী, তারা টেকসই বিনিয়োগে ততটা আগ্রহী নয়। তিনি আরও উল্লেখ করেন, একটি টেকসই পৃথিবী গড়তে শুধু টেকসই বিনিয়োগই যথেষ্ট নয়, বরং জীবনযাপন পদ্ধতিও টেকসই হতে হবে এবং ভোগপ্রবণতা কমাতে হবে, যার মধ্যে পানির কম ব্যবহারও অন্তর্ভুক্ত।
রিজওয়ানা হাসান জানান, বাংলাদেশের বস্ত্র খাতে বেশ কিছু টেকসই বিনিয়োগ দেখা যাচ্ছে, যেখানে পানির ব্যবহার কমানোর ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। তিনি ইঙ্গিত দেন যে, শিল্পে ভূগর্ভস্থ পানির বিনামূল্যে ব্যবহার বন্ধে সরকার একটি নীতিমালা তৈরি করছে। এছাড়াও, শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে জ্বালানি সংকটে না পড়ে, সেজন্য জ্বালানির উৎস মিশ্রণ নিয়ে কাজ চলছে। সরকারি সব প্রতিষ্ঠানের ছাদে সৌরবিদ্যুৎ স্থাপনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যা ২০৩০ সালের মধ্যে উৎপাদন খাতে ৩০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হবে।
ট্যানারি শিল্প নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে যৌথ ব্যর্থতা ছিল এবং এর জন্য এককভাবে কাউকে দায়ী করা যাবে না। বর্তমানে এই শিল্পকে নতুনভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
অ্যামচেমের প্রত্যাশা: আলোচনায় ছাড়, দূষণমুক্ত প্রবৃদ্ধি
অ্যামচেম সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ আশা প্রকাশ করেন যে, পাল্টা শুল্ক নিয়ে ভালোভাবে আলোচনা হলে কিছু না কিছু ছাড় পাওয়া যাবে। তিনি জানান, এ ধরনের আলোচনা শুধু বাংলাদেশের সঙ্গেই নয়, বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গেই হচ্ছে। অ্যামচেম আমেরিকা থেকে তুলা আমদানি এবং কাস্টমস সংস্কার নিয়েও কথা বলছে।
তিনি আরও বলেন, দূষণ এখন কেবল পরিবেশগত বিষয় নয়; বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রায় ৩.৪ শতাংশ দূষণের কারণে ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। এত চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, তিনি গর্বের সাথে উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশে এখন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পরিবেশবান্ধব কারখানা রয়েছে, যা দেশের টেকসই উন্নয়নের প্রতি তার প্রতিশ্রুতির প্রমাণ।
অ্যামচেম আয়োজিত এই নীতি সংলাপে সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন, যেখানে বাংলাদেশে টেকসই বিনিয়োগের বিভিন্ন দিক নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়।