আপনি একটি সংবাদপত্র বিষয়ক ওয়েবসাইট চালাচ্ছেন। নিয়মিত প্রকাশিত নিউজের লিংকগুলো প্রিভিউসহ ফেসবুকে শেয়ার করেন। কিন্তু আপনার পেজের রিচ ব্যাপকহারে কমে যাচ্ছে! আপনি তো আপনার ওয়েবসাইট এবং আপনার পাতার ব্যাপক প্রচার চান। আর ফেসবুক দিয়েই তা সম্ভব। তাহলে ফেসবুকে কীভাবে সংবাদ নিবন্ধ শেয়ার করলে বেশি রিচ পাওয়া যাবে সেটাই তো মাথাব্যথা তাই না? আসুন জেনে নেই কী প্রক্রিয়ায় তা বাড়বে।
১. প্রেক্ষাপট: একটি নবপ্রতিষ্ঠিত ওয়ার্ডপ্রেস-ভিত্তিক সংবাদপত্র ওয়েবসাইট এবং এর সহযোগী ফেসবুক পেজের ক্ষেত্রে, নিবন্ধগুলি কীভাবে শেয়ার করা হলে সর্বাধিক পাঠকপ্রিয়তা (reach) ও মিথস্ক্রিয়া (engagement) লাভ করবে, তা একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত প্রশ্ন। সরাসরি ওয়েবসাইট থেকে লি ঙ্ক শেয়ার করা বনাম অন্যান্য কৌশলের কার্যকারিতা নিয়ে প্রায়শই বিতর্ক দেখা যায়।
২. সরাসরি লিঙ্ক শেয়ারের সীমাবদ্ধতা (কেন রিচ কম হতে পারে):
ফেসবুকের অ্যালগরিদম এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যা ব্যবহারকারীদের প্ল্যাটফর্মের মধ্যেই দীর্ঘক্ষণ ধরে রাখতে চায়। এর ফলে, সরাসরি বাইরের ওয়েবসাইটের লিঙ্ক শেয়ার করার ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ দেখা যায়:
নেটিভ কন্টেন্টের প্রতি অগ্রাধিকার: ফেসবুক সাধারণত সেই কন্টেন্টকে অগ্রাধিকার দেয় যা ব্যবহারকারীকে ফেসবুক অ্যাপ বা ওয়েবসাইটে ধরে রাখে। বাইরের লিঙ্কে ক্লিক করে ব্যবহারকারী যখন প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে চলে যান, তখন সেই পোস্টের রিচ স্বয়ংক্রিয়ভাবে কমে যেতে পারে।
এনগেজমেন্ট সিগন্যালের অভাব: স্বয়ংক্রিয়ভাবে বা শুধু লিঙ্ক পেস্ট করে শেয়ার করা পোস্টে প্রায়শই একটি আকর্ষণীয় ছবি, একটি কৌতূহলোদ্দীপক প্রশ্ন, বা একটি ছোট ভিডিও টিজারের মতো উপাদান থাকে না, যা নেটিভ ফেসবুক কন্টেন্টের সাথে থাকে। প্রাথমিক মিথস্ক্রিয়া (লাইক, মন্তব্য, শেয়ার) কম হলে অ্যালগরিদম এটিকে কম গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট হিসেবে ধরে নেয়, ফলে রিচ সীমিত হয়।
‘স্প্যামি’ ধারণা: যদি স্বয়ংক্রিয় পোস্টিং প্লাগইনগুলি কেবল সাধারণ শিরোনাম সহ লিঙ্ক পোস্ট করে, তবে ফলোয়ারদের কাছে তা ব্যক্তি আগ্রহহীন এবং সম্ভাব্য ‘স্প্যামি’ মনে হতে পারে, যা তাদের মিথস্ক্রিয়ার আগ্রহ কমিয়ে দেয়।
ক্লিক-থ্রু রেট (CTR) পেনাল্টি: যদি পোস্টটি অনেক ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছানোর পরও খুব কম সংখ্যক ক্লিক পায়, ফেসবুক এটিকে দর্শকের জন্য অপ্রাসঙ্গিক বা কম আকর্ষণীয় কন্টেন্ট হিসেবে বিবেচনা করতে পারে, যা ভবিষ্যতে অনুরূপ পোস্টের রিচ আরও কমিয়ে দেয়।
৩. রিচ সর্বোচ্চকরণের জন্য কার্যকর কৌশলসমূহ:
সরাসরি লিঙ্ক শেয়ারের পরিবর্তে একটি কৌশলগত পদ্ধতি অনুসরণ করলে ফেসবুক পেজে নিবন্ধের রিচ ও এনগেজমেন্ট উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে:
ম্যানুয়াল/সুচিন্তিত শেয়ারিং (সর্বোত্তম):
আকর্ষণীয় পোস্ট তৈরি: শুধু লিঙ্ক পেস্ট না করে, একটি আকর্ষণীয় ক্যাপশন লেখা উচিত, যা:
পাঠককে আকৃষ্ট করে: একটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা, নিবন্ধ থেকে একটি চমকপ্রদ তথ্য দেওয়া, বা কৌতূহল তৈরি করা।
সংক্ষিপ্ত সারসংক্ষেপ: নিবন্ধটি কী বিষয়ে, তার একটি ছোট টিজার দেওয়া, পুরো বিষয়বস্তু ফাঁস না করে।
প্রাসঙ্গিক হ্যাশট্যাগ: জনপ্রিয় ও প্রাসঙ্গিক হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা, যা কন্টেন্টকে আরও সহজে খুঁজে পেতে সাহায্য করে।
শক্তিশালী কল টু অ্যাকশন (CTA): “বিস্তারিত পড়ুন,” “পূর্ণ গল্পের জন্য এখানে ক্লিক করুন,” “আপনার মতামত কী?” ইত্যাদি যুক্ত করা।
উচ্চ-মানের ভিজ্যুয়াল: ফেসবুক অত্যন্ত ভিজ্যুয়াল-নির্ভর প্ল্যাটফর্ম। তাই সর্বদা:
নিবন্ধের ফিচারড ইমেজটি উচ্চ-রেজোলুউশনের ও আকর্ষণীয় হওয়া উচিৎ।
একটি ছোট ভিডিও (১৫-৩০ সেকেন্ড) তৈরি করার কথা বিবেচনা করা যেতে পারে, যা নিবন্ধের মূল বিষয়গুলি সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরে বা প্রাসঙ্গিক ক্লিপ প্রদর্শন করে। ভিডিও সাধারণত ফেসবুকে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি রিচ পায়।
নেটিভ ভিডিও/ইমেজ হিসেবে পোস্ট: কিছু গল্পের জন্য, প্রথমে একটি ছোট ভিডিও ক্লিপ (ফেসবুকে নেটিভলি আপলোড করা) বা একটি ইনফোগ্রাফিক শেয়ার করা যেতে পারে। এরপর মন্তব্যে বা একটি ফলো-আপ পোস্টে মূল নিবন্ধের লিঙ্ক দেওয়া যেতে পারে। এটি প্ল্যাটফর্মের মধ্যে নেটিভ এনগেজমেন্টকে সর্বোচ্চ করে।
ফেসবুকের নিজস্ব ফিচার ব্যবহার:
ফেসবুক ইনস্ট্যান্ট আর্টিকেলস: যদি ওয়েবসাইটটি এর জন্য উপযুক্ত হয়, তবে ইনস্ট্যান্ট আর্টিকেলস সেটআপ করা উচিত। এটি ফেসবুক অ্যাপের মধ্যে কন্টেন্টকে তাৎক্ষণিকভাবে লোড হতে দেয়, যা ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতাকে মসৃণ করে এবং রিচ বাড়ায়, কারণ ব্যবহারকারীরা ফেসবুকের মধ্যেই থাকেন।
ফেসবুক গ্রুপস: প্রাসঙ্গিক ফেসবুক গ্রুপগুলিতে (স্থানীয় সম্প্রদায় বা আগ্রহ-ভিত্তিক গ্রুপ) নিবন্ধগুলি বিবেচনামূলকভাবে শেয়ার করা যেতে পারে, তবে গ্রুপের নিয়মাবলী কঠোরভাবে অনুসরণ করা আবশ্যক। স্প্যামিং এড়িয়ে গ্রুপের সাথে যুক্ত হয়ে মূল্যবান কন্ট্রিবিউশন রাখা উচিত।
ফেসবুক স্টোরি: নিবন্ধ সম্পর্কিত সংক্ষিপ্ত অংশ বা ‘পর্দার পিছনের’ কন্টেন্ট ফেসবুক স্টোরিতে শেয়ার করা যেতে পারে।
লাইভ ভিডিও: ব্রেকিং নিউজের জন্য বা সাক্ষাৎকারের জন্য ফেসবুকে লাইভ এসে বিষয়টি নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা যেতে পারে এবং তারপর পূর্ণ নিবন্ধের লিঙ্ক দেওয়া যেতে পারে। লাইভ ভিডিওর রিচ সাধারণত অসাধারণ হয়।
নিয়মিত ও সময়োপযোগী পোস্ট:
ধারাবাহিক পোস্টিং: নিয়মিত পোস্ট করা উচিৎ, তবে অতিরিক্ত পোস্ট এড়িয়ে চলা উচিৎ। এমন একটি ভারসাম্য খুঁজে বের করা উচিৎ যা দর্শককে আকৃষ্ট রাখে, কিন্তু বিরক্ত করে না।
সর্বোত্তম সময়: ফেসবুক পেজ ইনসাইটস ব্যবহার করে দর্শক কখন সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে তা নির্ধারণ করা এবং সেই অনুযায়ী পোস্টগুলো শিডিউল করা উচিত।
এনগেজমেন্ট উৎসাহিত করা:
মন্তব্যের উত্তর দেওয়া: পোস্টের মন্তব্যে ব্যবহারকারীদের সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হওয়া উচিত। এটি ফেসবুককে বোঝায় যে পেজটি সক্রিয় এবং এটি কমিউনিটি তৈরি করে।
প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা: পোস্টের শেষে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে মন্তব্য ও আলোচনাকে উৎসাহিত করা।
পোল তৈরি: নিবন্ধের বিষয়বস্তু সম্পর্কিত পোল তৈরি করে দর্শকের মতামত যাচাই করা যেতে পারে।
ওয়ার্ডপ্রেস প্লাগইন (স্মার্টলি ব্যবহার):
সোশ্যাল শেয়ারিং প্লাগইন: এমন প্লাগইন ব্যবহার করা উচিৎ যা ব্যবহারকারীদের সংবাদপত্র সাইট থেকে সহজেই নিবন্ধগুলি ফেসবুকে শেয়ার করতে দেয়।
কাস্টমাইজেশন সহ অটো-পোস্টিং: যদি স্বয়ংক্রিয় পোস্টিং ব্যবহার করা হয়, তবে এমন প্লাগইন বেছে নেওয়া উচিৎ যা কাস্টম পোস্ট টেমপ্লেট ব্যবহারের সুযোগ দেয়, যাতে কেবল একটি কাঁচা লিঙ্ক শেয়ার না করে একটি আকর্ষণীয় ক্যাপশন এবং ছবি সহ পোস্ট হয়। তবে, গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্টের জন্য ম্যানুয়াল কিউরেশন প্রায়শই বেশি কার্যকর।
৪. উপসংহার:
সরাসরি লিঙ্ক শেয়ার করা প্রায়শই কম রিচ নিয়ে আসে কারণ এটি ব্যবহারকারীকে ফেসবুক থেকে সরিয়ে নেয় এবং প্ল্যাটফর্মের এনগেজিং, নেটিভ কন্টেন্টের প্রতি অগ্রাধিকারের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। রিচ সর্বাধিক করার জন্য, সংবাদপত্র পেজটিকে অবশ্যই সুচিন্তিত, উচ্চ-মানের পোস্ট তৈরি করতে হবে যার সাথে থাকবে আকর্ষণীয় ক্যাপশন, শক্তিশালী ভিজ্যুয়াল (বিশেষ করে নেটিভ ভিডিও/ইমেজ), এবং দর্শকের সাথে সক্রিয় মিথস্ক্রিয়া। এই পদ্ধতিটি ফেসবুকে ভ্যালু তৈরি করবে এবং একই সাথে সংবাদপত্র সাইটে ট্র্যাফিক ফিরিয়ে আনবে।