১০ জুলাই ২০২৫, ২:৩২:১৯
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে বিশেষ পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। নির্বাচনের আগে জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি) এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) রদবদলে ‘লটারি’ পদ্ধতি ব্যবহারের সম্ভাব্যতা যাচাই করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচনকালীন প্রশাসনে যেকোনো প্রভাব বিস্তারের সুযোগ বন্ধ করে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার বার্তা দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (৯ জুলাই) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীসহ আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক বৈঠকে নির্বাচনকে ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতির নির্দেশনা দেন প্রধান উপদেষ্টা। পরে রাতে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপ-প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বৈঠকের বিস্তারিত তুলে ধরেন।
নিরপেক্ষ প্রশাসন ও লটারি পদ্ধতি: উপ-প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, কর্মকর্তাদের পরিচিতি নম্বর ধরে লটারির মাধ্যমে এই নিয়োগ (রদবদল) করা যায় কিনা, তা ভেবে দেখা হোক, যাতে কোনো মহল প্রভাব খাটাতে না পারে। এই রদবদল জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই সম্পন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা ও নিরাপত্তা বাহিনীর প্রস্তুতি: বৈঠকে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা ফিরিয়ে আনার বিষয়েও আলোচনা হয়। প্রধান উপদেষ্টা আইন খতিয়ে দেখতে বলেছেন, যাতে নির্বাচন কমিশন ব্যাপক অনিয়ম হলে পুরো আসনের নির্বাচন বাতিল করার ক্ষমতা ফিরে পায়, যা পূর্বে আইন সংশোধন করে খর্ব করা হয়েছিল।
নির্বাচন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রস্তুতিতে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে। পুলিশ, বিজিবি ও কোস্টগার্ডে ১৭ হাজার নতুন সদস্য নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ এই সময়ের মধ্যেই শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৮ লাখ সদস্য (প্রায় ৫ লাখ ৭০ হাজার আনসার ও ১ লাখ ৪১ হাজার পুলিশসহ) মাঠে থাকবেন, যাদের ডিসেম্বরের মধ্যে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করার প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করতে হবে। নির্বাচনের আগে ও পরে সংঘাত প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মোতায়েনের সময় চার দিন থেকে সাত দিনে বৃদ্ধির বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। এছাড়াও, নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আগামী মাসগুলোতে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ১৬ হাজার কেন্দ্রে পুলিশের বডিক্যাম এবং সিসিটিভি স্থাপনেরও নির্দেশনা এসেছে।
তরুণ ভোটার ও স্বচ্ছতার প্রতি জোর: প্রধান উপদেষ্টা তরুণ ভোটারদের ভোট প্রদানের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। যারা প্রথমবারের মতো ভোট দেবেন, তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এবং বিপুল সংখ্যক তরুণ ভোটারের ভোট দিতে না পারার প্রেক্ষাপটে প্রধান উপদেষ্টা ১৮ থেকে ৩৩ বছর বয়সী তরুণদের জন্য পৃথক ভোটার তালিকা এবং তাদের জন্য আলাদা ভোটিং বুথের সম্ভাব্যতা যাচাই করার নির্দেশ দিয়েছেন।
সেনাবাহিনীর ভূমিকা ও অন্যান্য নির্দেশনা: নির্বাচনের দিন সেনাবাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে থাকবে বলে জানানো হয়েছে। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের ভোট বিষয়ে প্রশিক্ষণের অভাব দূর করে তাদের ভালোভাবে প্রস্তুত করার নির্দেশনাও এসেছে। এছাড়াও, এক থানার পুলিশকে অন্য থানায় মোতায়েন করে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার বিষয়টি বিবেচনায় আনার কথাও বলা হয়েছে।