প্রভাতী বার্তা প্রতিবেদক
দেশের অন্যতম মোবাইল আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’-এর বিরুদ্ধে এক চাঞ্চল্যকর আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ প্রকাশ পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে উঠে এসেছে, প্রতিষ্ঠানটি ভুয়া অ্যাকাউন্ট, জালিয়াতি এবং সরকারি ভাতা আত্মসাতের মতো ভয়াবহ অনিয়মে জড়িত। এ ঘটনায় সরাসরি সরকারি তহবিলসহ সাধারণ গ্রাহকের অর্থ মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে।
রোববার (১ জুন) রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক লিখিত বিবৃতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়,অনুমোদন ছাড়াই নগদ ৬৪৫ কোটি টাকার ‘ই-মানি’ ইস্যু করেছে, যার কোনো প্রকৃত অর্থ সাপোর্ট নেই। এর ফলে ডাক বিভাগ তথা সরকারের সরাসরি আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এ অর্থের বড় একটি অংশ ৪১টি অননুমোদিত ডিস্ট্রিবিউটর প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তুলে নেওয়া হয়েছে, যেগুলোর সঠিক গন্তব্য নির্ধারণ করা যায়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকার প্রদত্ত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অর্থ সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছানোর আগেই গায়েব হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, নগদ কর্তৃপক্ষ একটি ভুয়া রিপোর্টিং পোর্টাল ব্যবহার করে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ডাক বিভাগকে বিভ্রান্ত করেছে।
আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো, এই জালিয়াতির ঘটনায় অভিযুক্ত সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভির আহমেদ মিশুক আবারও নিজেকে এমডি ঘোষণা করেছেন এবং অপর অভিযুক্ত শাফায়েত আলমকে সিইও পদে পুনঃনিযুক্ত করেছেন। এ নিয়োগ হয়েছে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজমেন্ট বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই।
এছাড়া, বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, নগদের সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার সিস্টেম আন্তর্জাতিক মানের নয়, যা ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ। এমনকি সিস্টেম লগ না থাকায় ভবিষ্যতে জালিয়াতির প্রমাণ সংগ্রহ করাও কঠিন হয়ে পড়বে।
নগদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ৪১টি বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান প্রায় ১,৭১১ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে, যার একটি বড় অংশ সরকারি ভাতা বলে জানা গেছে। পাশাপাশি, কিছু ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে ১৪৪ কোটি টাকা অবৈধভাবে স্থানান্তরের প্রমাণও মিলেছে।
মালিকানা নিয়ে অনিয়ম ও সন্দেহজনক লেনদেন
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নগদের মালিকানা বারবার বদল করা হয়েছে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে, যার মধ্যে রয়েছে ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডের একটি প্রতিষ্ঠান। এ বিষয়ে মানি লন্ডারিং ও বৈদেশিক মুদ্রা আইনের সম্ভাব্য লঙ্ঘনের আশঙ্কা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গ্রাহকের অর্থ ঝুঁকিতে, অডিট কার্যক্রমও স্থগিত
চলমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়োগপ্রাপ্ত প্রশাসক দলের কার্যক্রম স্থগিত করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের এক আদেশ। এর ফলে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ফের নগদের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গ্রাহকের অর্থ ও তথ্য ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। একইসঙ্গে অডিট ফার্ম কেপিএমজি-কে কার্যক্রম চালাতে বাধা দেওয়া হচ্ছে এবং প্রশাসকের সিস্টেম অ্যাক্সেস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে দেশের বৃহৎ পরিসরের মোবাইল ফিনান্সিয়াল সেবা গ্রাহকরা এক অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনা ডিজিটাল লেনদেনের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা হ্রাস করতে পারে এবং আর্থিক খাতে দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
www.provatibarta.net www.facebook.com/provatibarta.online www.youtube.com/@ProvatiBarta