২ জুন ২০২৫, ৩:৫৪:৫৩
দেশের প্রথম মনোরেল আসছে চট্টগ্রামে: যানজট নিরসনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন, ২০ হাজার কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগ
যানজট কবলিত বন্দরনগরী চট্টগ্রামের গণপরিবহন ব্যবস্থায় এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা হতে যাচ্ছে। দেশের প্রথম মনোরেল চালুর মধ্য দিয়ে এই শহরে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। এই প্রকল্পের মাধ্যমে শহরের যানজট নিরসন ও পরিবেশবান্ধব যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় এক বড় পদক্ষেপ নেওয়া হলো।
গতকাল রবিবার (১ জুন) চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের চেম্বার মিলনায়তনে চসিক এবং মিশরভিত্তিক ওরাসকম গ্রুপ ও আরব কন্ট্রাক্টরস গ্রুপের মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তি অনুযায়ী, ওরাসকম গ্রুপ ও আরব কন্ট্রাক্টরস গ্রুপ শুধু প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডিই করবে না, বরং সম্পূর্ণ প্রকল্পেই অর্থায়ন ও বাস্তবায়ন করবে।
অনুষ্ঠানে চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন এই উদ্যোগকে চট্টগ্রামের জন্য একটি “যুগান্তকারী সমাধান” হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই শহরকে সুন্দর ও পরিকল্পিত করার এবং যানজট কমানোর চেষ্টা করে আসছি। ট্রাফিক বিভাগের সাথে সমন্বয়, স্মার্ট ট্রাফিক সিস্টেম চালু, নতুন বাস টার্মিনাল নির্মাণসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে, মনোরেল এই সমস্যাগুলোর একটি কার্যকর ও স্থায়ী সমাধান হবে।”
মেয়র জানান, প্রস্তাবিত মনোরেল প্রকল্পের মোট দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ৫৪ কিলোমিটার, যার জন্য আনুমানিক ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই বিশাল অঙ্কের পুরো অর্থায়নই আসবে বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ওরাসকম কনস্ট্রাকশন ও আরব কন্ট্রাক্টরস থেকে। চসিকের এতে কোনো আর্থিক দায় থাকবে না, কেবল প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্ট ও ভূমি বরাদ্দ দেওয়া হবে।
ডা. শাহাদাত হোসেন আরও বলেন, “মনোরেল শুধু যানজট নিরসনেই নয়, চট্টগ্রামকে একটি পরিবেশবান্ধব, পর্যটন ও ব্যবসাবান্ধব নগরীতে রূপান্তরের দিকে এগিয়ে নেবে। এটি দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে সংযোগের একটি আধুনিক সেতুবন্ধ তৈরি করবে।”
গ্রেটার চিটাগাং ইকোনমিক ফোরামের প্রেসিডেন্ট আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী এই প্রকল্পকে “স্মার্ট ও টেকসই নগরী” গড়ার অংশ হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন। তিনি ব্যবসায়ী, পেশাজীবী ও নগরবাসীকে নিয়ে একটি ইকোনমিক ফোরাম গঠন করে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন।
আরব কন্ট্রাক্টরস ও ওরাসকম পেনিনসুলা কনসোর্টিয়ামের চিফ রিপ্রেজেনটেটিভ কাউসার আলম চৌধুরী চট্টগ্রামের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “চট্টগ্রাম বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী। এখানে যানজট ও পরিবহন সংকট ক্রমবর্ধমান। মনোরেল একটি আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব সমাধান। আমরা এই প্রকল্পে পূর্ণাঙ্গ বিনিয়োগে আগ্রহী।”
মনোরেল হলো এমন এক ধরনের রেলওয়ে ব্যবস্থা যেখানে ট্রেনগুলো একটি মাত্র রেল ট্র্যাক বা বিমের ওপর দিয়ে চলাচল করে। প্রচলিত ট্রেনের মতো দুটি সমান্তরাল ট্র্যাকের পরিবর্তে মনোরেলে একটি একক, সরু ট্র্যাক ব্যবহৃত হয়। এটি সাধারণত উঁচু স্থানে (elevated) তৈরি করা হয়, অর্থাৎ মাটির উপরে স্তম্ভের ওপর দিয়ে এর ট্র্যাক স্থাপন করা হয়। এতে যানজট এড়িয়ে দ্রুত চলাচল করা যায় এবং ভূমির ব্যবহার কম হয়। মনোরেল সাধারণত বিদ্যুৎচালিত হয় এবং কম শব্দ করে। এটি মূলত বিমানবন্দর, বিনোদন পার্ক, ছোট শহর বা নির্দিষ্ট এলাকায় যাত্রী পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হয়।