বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি

ডিজিটাল সুরক্ষায় জরুরি পরামর্শ: স্মার্টফোন ও কম্পিউটার নিরাপদ রাখুন

৫ জুলাই ২০২৫, ১:৫৩:৩৯

Urgent advice on digital security: Keep your smartphone and computer safe.
ফাইল ছবি

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে স্মার্টফোন ও কম্পিউটার এখন অপরিহার্য সঙ্গী। ব্যক্তিগত ছবি, ভিডিও থেকে শুরু করে ব্যাংকিং তথ্য, অফিসিয়াল নথি—সবই সংরক্ষিত থাকে এই ডিজিটাল ডিভাইসগুলোতে। ফলে এগুলো হ্যাকারদের জন্য পরিণত হয়েছে লোভনীয় লক্ষ্যবস্তুতে। শুধু সাইবার হামলা নয়, বাস্তব জীবনে ডিভাইস চুরির ঝুঁকিও নেহায়েত কম নয়। এই ক্রমবর্ধমান হুমকি থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে বিশেষজ্ঞদের দেওয়া কিছু অপরিহার্য পরামর্শ নিচে তুলে ধরা হলো।

স্মার্টফোন সুরক্ষায় অত্যাবশ্যকীয় পদক্ষেপ:

স্মার্টফোনকে সাইবার হামলা থেকে নিরাপদ রাখতে এবং ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখতে নিন্মোক্ত বিষয়গুলো মেনে চলা জরুরি:

১. শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ও টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন: আপনার ফোনের লক স্ক্রিন, ই-মেইল এবং অন্যান্য অনলাইন অ্যাকাউন্টে ছোট-বড় অক্ষর, সংখ্যা ও বিশেষ চিহ্নের সমন্বয়ে গঠিত শক্তিশালী ও অনন্য পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। কখনই সহজবোধ্য পাসওয়ার্ড বা একাধিক অ্যাকাউন্টে একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করবেন না। পাশাপাশি, সকল গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্টে ‘টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন’ (2FA) বা দুই স্তরের নিরাপত্তা চালু রাখুন। এতে পাসওয়ার্ড চুরি হলেও হ্যাকার সহজে প্রবেশ করতে পারবে না।

২. অ্যাপ ডাউনলোড ও ব্যবহারে সতর্কতা: কেবল গুগল প্লে স্টোর বা অ্যাপ স্টোরের মতো নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করুন এবং অ্যাপ নির্মাতার নির্ভরযোগ্যতা যাচাই করুন। অপরিচিত বা অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ ইনস্টল করা থেকে বিরত থাকুন এবং রিভিউ না দেখে কোনো অ্যাপ ইনস্টল করবেন না।

৩. নিয়মিত আপডেট ও অ্যান্টিভাইরাস: স্মার্টফোনের অপারেটিং সিস্টেম (OS) এবং অ্যাপ্লিকেশনগুলো নিয়মিত হালনাগাদ করুন। এসব আপডেটের মাধ্যমে নির্মাতারা নিরাপত্তা ত্রুটিগুলো মেরামত করে থাকেন। পাশাপাশি, সব সময় আপডেটেড অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করুন এবং অটো-আপডেট চালু রাখুন। সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা সপ্তাহে অন্তত একবার ফোন রিস্টার্ট করার পরামর্শ দেন, যা ‘জিরো-ক্লিক এক্সপ্লয়েট’ (ব্যবহারকারীর ক্লিক ছাড়াই হামলা) প্রতিরোধে সহায়ক।

৪. পাবলিক ওয়াই-ফাই ও লিংকে সতর্কতা: পাবলিক বা ফ্রি ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করলে ব্যক্তিগত তথ্য চুরির ঝুঁকি থাকে। তাই এক্ষেত্রে সর্বদা একটি সুরক্ষিত ভিপিএন (Virtual Private Network) ব্যবহার করুন। এছাড়া, অপরিচিত বা সন্দেহজনক ই-মেইল/এসএমএস-এর লিংকে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকুন। প্রেরকের পরিচয় নিশ্চিত না হলে এসব বার্তা বা ই-মেইল খোলার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন।

৫. রিকভারি ই-মেইল ও বায়োমেট্রিক লক: পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে অ্যাকাউন্ট উদ্ধারের জন্য রিকভারি ই-মেইল যুক্ত রাখা জরুরি। ব্যাংক, স্বাস্থ্যসেবা বা মেসেজিং অ্যাপের মতো সংবেদনশীল অ্যাপগুলোতে ফেস আইডি বা ফিঙ্গারপ্রিন্টের মতো বায়োমেট্রিক লক ব্যবহার করুন।

কম্পিউটার সুরক্ষায় ইউএসবি সতর্কতা:

কম্পিউটারে সাইবার হামলার একটি প্রায়শই উপেক্ষিত মাধ্যম হলো ইউএসবি পোর্ট। ইউএসবি-বাহিত ভাইরাস থেকে বাঁচতে কিছু কার্যকর পদক্ষেপ:

১. অপরিচিত ইউএসবি পরিহার: অচেনা বা অনির্ভরযোগ্য উৎস থেকে পাওয়া কোনো ইউএসবি ড্রাইভ কম্পিউটারে ব্যবহার করবেন না। একান্ত প্রয়োজনে ব্যবহারের আগে তা স্ক্যান করে নিন।

২. অটোরান/অটোপ্লে নিষ্ক্রিয় করুন: অপারেটিং সিস্টেমে ‘অটোরান’ বা ‘অটোপ্লে’ ফিচারটি নিষ্ক্রিয় আছে কিনা নিশ্চিত করুন, কারণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ম্যালওয়্যার কার্যকর হতে পারে।

৩. শক্তিশালী অ্যান্টিভাইরাস ও আপডেট: একটি নির্ভরযোগ্য ও হালনাগাদ অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করুন। অপারেটিং সিস্টেম ও অন্যান্য সফটওয়্যার নিয়মিত আপডেট করে নিরাপত্তা ত্রুটি দূর করুন।

৪. গুরুত্বপূর্ণ ফাইলের ব্যাকআপ: যেকোনো দুর্ঘটনা বা ভাইরাস আক্রমণের ক্ষেত্রে ডেটা ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে নিয়মিত গুরুত্বপূর্ণ ফাইলগুলোর ব্যাকআপ নিন।

৫. পাবলিক চার্জিং স্টেশন এড়িয়ে চলুন: পাবলিক ইউএসবি চার্জিং স্টেশনগুলো ‘জুস জ্যাকিং’ (Juice Jacking) নামক সাইবার হামলার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। ব্যক্তিগত চার্জার ব্যবহার করাই নিরাপদ।

চুরি প্রতিরোধে শারীরিক নিরাপত্তা:

শুধু হ্যাকিং নয়, স্মার্টফোন চুরি হওয়া থেকেও রক্ষা করা জরুরি।

১. অ্যান্টি-থেফট ফিচার চালু রাখুন: অ্যান্ড্রয়েড ও আইফোনের বিল্ট-ইন চুরি প্রতিরোধের ফিচারগুলো (যেমন: অ্যান্ড্রয়েডে ‘অ্যাডভান্সড প্রটেকশন’, ‘থেফট ডিটেকশন লক’, ‘অফলাইন ডিভাইস লক’; আইওএস-এ ‘স্টোলেন ডিভাইস প্রটেকশন’, ‘ফাইন্ড মাই’) সক্রিয় রাখুন। এগুলো দূর থেকে ফোন লক বা ট্র্যাক করতে সাহায্য করে।

২. ই-সিম ব্যবহার: প্রচলিত সিমের চেয়ে ই-সিম অনেক বেশি নিরাপদ, কারণ এটি সহজে খুলে ফেলা যায় না এবং ফোন ট্র্যাক করা সহজ হয়।

৩. শারীরিক সংযুক্তি (Tether): ভিড়ের মধ্যে চুরি ঠেকাতে ফোন টেথার বা ল্যানিয়ার্ড ব্যবহার করে শরীরের সঙ্গে সংযুক্ত রাখা যেতে পারে।

স্মার্টফোন ও কম্পিউটার এখন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই ডিজিটাল সুরক্ষায় এই পদক্ষেপগুলো কেবল প্রয়োজনই নয়, বরং অপরিহার্য। একটু সচেতনতা ও কিছু নিরাপত্তা সেটিংস আপনার ব্যক্তিগত তথ্য এবং ডিভাইসকে সুরক্ষিত রাখতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

আরও খবর:

বিবিধ