১২ জুলাই ২০২৫, ৯:০৮:৩৯
‘১২ দিনের যুদ্ধে ৫০০ ইসরায়েলি নিহত’: ইরানের পার্লামেন্ট স্পিকারের দাবি
সম্প্রতি সমাপ্ত ইরান ও ইসরায়েল-মার্কিন জোটের মধ্যকার ১২ দিনের সংঘাতে ইসরায়েলের হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা সরকারি তথ্যের চেয়ে অনেক বেশি—এমনটাই চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন ইরানের পার্লামেন্ট স্পিকার মোহাম্মদ বাকের কালিবাফ। তিনি বলেছেন, ইসরায়েলের নিরাপত্তা গবেষণা কেন্দ্রের দেওয়া ৩,৫২০ জন আহতের তথ্য বিশ্লেষণ করলে অন্তত ৫০০ জন ইসরায়েলি নিহত হয়েছে বলে অনুমান করা যায়।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) ইরানের আইআরআইবি-১ টিভি চ্যানেলে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কালিবাফ এই দাবি করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইসরায়েলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সরকারিভাবে জানানো সংখ্যার চেয়ে প্রকৃতপক্ষে অনেক বেশি ছিল।
ব্যর্থতার কারণে যুদ্ধবিরতি, নমনীয়তার কারণে নয়: যুদ্ধবিরতির প্রেক্ষাপট সম্পর্কে ইরানের পার্লামেন্ট স্পিকার জানিয়েছেন, ইসরায়েলের সাম্প্রতিক সামরিক আগ্রাসন বন্ধ হয়েছে মূলত তাদের নিজস্ব ব্যর্থতার কারণে, কোনো রকম নমনীয় মনোভাবের কারণে নয়। তার দাবি, স্থল ও আকাশে ইরানের নিয়ন্ত্রণই ছিল ইসরায়েলের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ। তিনি বলেন, “আমরা ইসরায়েলের সামরিক ও প্রতিরক্ষা কেন্দ্রগুলো অকার্যকর করে দিয়েছি।”
কালিবাফ আরও জানান, যুদ্ধের শেষদিকে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার নির্ভুলতার হার ছিল ৯০ শতাংশের বেশি। এর ফলস্বরূপ ইসরায়েলের প্রধান সামরিক ও বিমান প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো সম্পূর্ণ অচল হয়ে পড়েছিল। তিনি দাবি করেন, ইরানের লক্ষ্যবস্তুর ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল, যা ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতির পথ বেছে নিতে বাধ্য করে।
ন্যাটো ও পশ্চিমা শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই এবং ক্ষতিপূরণের দাবি: ইরানের স্পিকার জোর দিয়ে বলেন, ইরান কেবল ইসরায়েলের বিরুদ্ধেই লড়েনি, বরং মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো ও পশ্চিমা শক্তির বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ গড়েছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের বিরুদ্ধে হামলার জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তার মতে, যুদ্ধকালীন আলোচনার ভেতরে হামলা চালানো যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিমুখী নীতিরই বহিঃপ্রকাশ।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরোক্ষ আলোচনার প্রসঙ্গে কালিবাফ বলেন, যখন আলোচনা চলছিল তখনই আমেরিকা ইরানে হামলা চালিয়ে তাদের অসৎ উদ্দেশ্য প্রকাশ করেছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, যদি আমেরিকা সত্যিই কূটনৈতিক সমাধান চায়, তাহলে তাদের প্রথমেই নিজেদের আগ্রাসন ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের ব্যাখ্যা দিতে হবে। “আলোচনার মধ্যে আমাদের ওপর হামলা চালালো কেন—এই প্রশ্নের উত্তর আমেরিকাকে দিতেই হবে,” বলেন কালিবাফ। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘আবর্জনার ভাগাড়’ হিসেবেও অভিহিত করেন, যা পশ্চিমাদের ‘নোংরা কাজ সম্পাদনের মাধ্যম’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কালিবাফ উল্লেখ করেন, যদি আমেরিকা সত্যিই সৎ হয়, তাহলে সাম্প্রতিক হামলায় যে ক্ষতি করেছে, তার পূর্ণ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘বুম বুম তেলআবিব’ গানটি এখন ইরানের গণকূটনীতির প্রতীক হয়ে উঠেছে এবং এক বিলিয়ন ভিউ পাওয়া এই গানকে তিনি ‘মূল্যবোধের যুদ্ধে ইরানের বিজয়ের প্রমাণ’ বলে অভিহিত করেন।
উল্লেখ্য, গত ১৩ জুন, ২০২৫-এ ইসরায়েল প্রকাশ্যে ও উস্কানিমূলক আগ্রাসনের মাধ্যমে ইরানে হামলা চালায়, যাতে দেশটির উচ্চপর্যায়ের সামরিক কমান্ডার ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। এরপর ২২ জুন, যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে এই যুদ্ধে যোগ দিয়ে জাতিসংঘ সনদ ও পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) লঙ্ঘন করে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। ইরানে আগ্রাসনের কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একঘরে হয়ে পড়া ইসরায়েল ২৪ জুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মাধ্যমে একতরফাভাবে হামলা বন্ধের ঘোষণা দেয়।