অর্থনীতি

আসছে নতুন বাজেট: এক নজরে দেখে নিন কোন পণ্যের দাম বাড়বে, কোনটা কমবে

৩১ মে ২০২৫, ১২:৩৪:১৩

0Shares
A new budget is coming: Take a look at which products' prices will increase and which will decrease.
আসছে নতুন বাজেট: এক নজরে দেখে নিন কোন পণ্যের দাম বাড়বে, কোনটা কমবে

আগামী ২ জুন জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এবারের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার প্রায় ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। প্রতিবারের মতো এবারও বাজেটে কিছু পণ্যের ওপর করের বোঝা বাড়তে পারে, যার ফলে সেসব পণ্যের দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে, কিছু খাতে কর ছাড়ের সুবিধা দেওয়ায় বেশ কিছু পণ্যের দাম কমারও আশা করা হচ্ছে। আসুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে:

প্লাস্টিক পণ্য: পরিবেশ সুরক্ষায় এবং ব্যবহার কমাতে প্লাস্টিকজাত হোম ও কিচেন ওয়্যারসহ বিভিন্ন প্লাস্টিক পণ্যে ভ্যাট দ্বিগুণ করে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব আসতে পারে।

হেলিকপ্টার: হেলিকপ্টার আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ করা হতে পারে। এর মধ্যে ১০% শুল্ক, ১৫% ভ্যাট, ৫% অগ্রিম কর ও ৫% অগ্রিম আয়কর অন্তর্ভুক্ত থাকবে। ফলে হেলিকপ্টারে যাতায়াত আরও ব্যয়বহুল হবে।

সামাজিক অনুষ্ঠান: কনভেনশন হল ও কনফারেন্স সেন্টারের সেবার ক্ষেত্রে উৎসে কর কর্তন ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হতে পারে। এতে বিয়েসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের খরচ বাড়বে।

একাধিক গাড়ির মালিকানা: একাধিক গাড়ি থাকলে সিসিভেদে পরিবেশ সারচার্জ ২৫ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকার বর্তমান বিধান বাড়িয়ে সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ লাখ টাকা করা হতে পারে।

গৃহস্থালি ইলেকট্রনিকস: রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার ও এসির ক্ষেত্রে ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হতে পারে।

মোবাইল ফোন: মোবাইল ফোনের বিভিন্ন উপকরণ যেমন প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড, চার্জার, ব্যাটারি, হাউজিং, ক্যাসিংসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশে ভ্যাট ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪ শতাংশ করা হতে পারে।

এলপিজি সিলিন্ডার: রান্নার কাজে ব্যবহৃত এলপিজি সিলিন্ডারের ভ্যাটহার বেড়ে ১০ শতাংশ হতে পারে।

নির্মাণ সামগ্রী: বাড়ি নির্মাণের খরচ বাড়তে পারে। সিমেন্ট শিট উৎপাদনে ভ্যাট ৫% থেকে ১৫%, ফেরো ম্যাঙ্গানিজ ও ফেরো সিলিকো ম্যাঙ্গানিজ অ্যালয় উৎপাদনে প্রতি টনে কর ১০০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা এবং ফেরো সিলিকন অ্যালয়ের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ভ্যাট ১২০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা করা হতে পারে। লিফট উৎপাদনে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট এবং নির্মাণ সংস্থার সেবার বিপরীতে ভ্যাট বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব আসতে পারে।

ক্রেডিট রেটিং: ক্রেডিট রেটিং এজেন্সির সেবার ওপর ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হতে পারে।

ছোট গৃহস্থালি অ্যাপ্লায়েন্স: ব্লেন্ডার, জুসার, মিক্সার, গ্রাইন্ডার, ইলেকট্রিক কেটলি, আয়রন, রাইস কুকারের মতো পণ্য যা এতদিন ভ্যাটমুক্ত ছিল, সেগুলোর ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হতে পারে।

থ্রি-হুইলার: ফোর স্ট্রোক থ্রি-হুইলারের ভ্যাট বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হতে পারে।

সুতা: কটন সুতা, কৃত্রিম আঁশ ও অন্যান্য আঁশের মিশ্রণে তৈরি সুতার উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট বাড়ানো হতে পারে।

যেসব পণ্যের দাম কমতে পারে:

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য: দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখতে চাল, ডাল, আটা, লবণ, ভোজ্যতেলসহ একাধিক কৃষি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমতে পারে। কারণ, এসব পণ্যের স্থানীয় ঋণপত্রের (এলসি) কমিশনের ওপর উৎসে কর অর্ধেক করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

যাত্রীবাহী বাস: যাত্রীসেবার মান বাড়াতে ১৬ থেকে ৪০ আসনের বাস আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হতে পারে। ফলে যাত্রীবাহী বাসের দাম কমতে পারে।

পরিবেশবান্ধব পণ্য: সুপারির খোল দিয়ে তৈরি তৈজসপত্র ও হাতে তৈরি মাটির পণ্যে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হতে পারে, যা বর্তমানে ১৫ শতাংশ।

কম্পিউটার ও ফল: কম্পিউটার, এর যন্ত্রাংশ এবং সব ধরনের ফল ক্রয়ের জন্য স্থানীয় ঋণপত্রের কমিশনের ওপর উৎসে কর ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.৫০ শতাংশ করা হতে পারে।

এলএনজি: এলএনজি আমদানিতে বিদ্যমান ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ২ শতাংশ অগ্রিম কর থেকে অব্যাহতি দেওয়া হতে পারে। এতে বিদ্যুৎ, শিল্প উৎপাদন ও পরিবহন খাতে ব্যয় কমতে পারে।

স্যানিটারি ন্যাপকিন ও অন্যান্য: স্যানিটারি ন্যাপকিন, প্যাকেটজাত তরল দুধ, পলিপ্রোপাইলিন স্ট্যাপল ফাইবারে ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব করা হতে পারে। এছাড়া ই-বাইকের উৎপাদন ও উপকরণ আমদানি, ফ্রিজ-এসির কম্প্রেসার উৎপাদনের উপকরণ আমদানিতেও ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব আসতে পারে।

বিদ্যুৎ ও কমিশন: ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীর বিদ্যুৎ ক্রয়ের কর এবং বিদেশি ক্রেতার এজেন্টের কমিশন বা পারিশ্রমিকের কর কমতে পারে।

জমি ও ফ্ল্যাট: জমি ও ফ্ল্যাট কেনাবেচায় নিবন্ধন খরচ ও উৎসে কর কমানোর প্রস্তাবও আসতে পারে এবারের বাজেটে।

অন্যান্য পরিবর্তন:

বাজেট প্রস্তাবনায় করদাতাদের জন্য কিছুটা স্বস্তিও থাকছে। আয়কর রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা কমানো হতে পারে। বর্তমানে ৩৯টি সেবার ক্ষেত্রে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক হলেও, নতুন বাজেটে ১২ ধরনের সেবার ক্ষেত্রে শুধু টিআইএন দাখিল করলেই চলবে বলে প্রস্তাব করা হয়েছে।

সামগ্রিকভাবে, আসন্ন বাজেট কিছু ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ বাড়ালেও, নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু পণ্যের দাম কমানো এবং নির্দিষ্ট কিছু শিল্পকে উৎসাহিত করার প্রয়াসও দেখা যাচ্ছে। চূড়ান্ত বাজেট ঘোষণার পরই এর সম্পূর্ণ প্রভাব বোঝা যাবে।

0Shares

আরও খবর:

বিবিধ