২৯ মে ২০২৫, ১০:১৮:২২
প্রভাতী বার্তা, আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বুধবার (২৮ মে) পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি এবং সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল। অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টে দেশটির প্রথম হিজাব পরিহিতা মুসলিম নারী সিনেটর, ফাহিমা পায়মানকে অশোভন প্রস্তাব দেওয়া এবং হেনস্তা করার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় অস্ট্রেলিয়ার রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে এবং বিষয়টি নিয়ে তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সম্প্রচারমাধ্যম এবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দেশটির নারী মুসলিম সিনেটর ফাতিমা পেইম্যান (ফাহিমা পায়মান নামেও পরিচিত) বলেন, পার্লামেন্টের একজন পুরুষ সহকর্মী ‘অনেক বেশি মদ্যপান’ করার পর তাঁকে মদ্য পানের প্রস্তাব দেন এবং আপত্তিকরভাবে টেবিলের ওপর নাচতে বলেন। এই আচরণ তাঁর ধর্মীয় পরিচয় এবং একজন নারী হিসেবে তাঁর মর্যাদাকে হেয় করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছে। সিনেটর পায়মান নিজে এই বিষয়ে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
আফগানিস্তানে জন্ম নেওয়া ফাতিমা পায়মান শুধু অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে প্রথম হিজাব পরা সিনেটরই নন, বরং তিনি একজন স্বাধীনচেতা ও স্পষ্টভাষী মুসলিম নেত্রী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। ঘটনাটি সামনে আসার পর তার সাহসিকতার প্রশংসা করছেন অনেকে।
সিনেটর ফাহিমা পায়মান এই ঘটনাকে অত্যন্ত লজ্জাজনক, অগ্রহণযোগ্য এবং অস্ট্রেলিয়ার বহুসংস্কৃতির চেতনার পরিপন্থী বলে অভিহিত করেছেন। তিনি এক বিবৃতিতে (বা সাক্ষাৎকারে) বলেন, “সংসদের মতো একটি পবিত্র স্থানে যেখানে দেশের আইন প্রণয়ন করা হয়, সেখানে এই ধরনের নিম্নরুচির আচরণ শুধু আমার প্রতি ব্যক্তিগত আক্রমণ নয়, বরং এটি অস্ট্রেলিয়ার সকল নারী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি অবমাননাকর। আমি আশা করি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হবে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “পার্লামেন্টে বা অন্য কোনো কর্মক্ষেত্রে এই ধরনের আচরণ কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। আমরা একটি সম্মানজনক ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
বিরোধী দলের নেতা পিটার ডাটনও এই ঘটনার নিন্দা করে বলেছেন, “যেকোনো ধরনের হেনস্তা বা অশোভন আচরণ নিন্দনীয়। অভিযোগটি গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিৎ।”
বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা, নারী অধিকার সংগঠন এবং মুসলিম কমিউনিটির নেতারা এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, এই ঘটনা অস্ট্রেলিয়ার রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ এবং তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে।
বিভিন্ন মহল থেকে এই অভিযোগের নিরপেক্ষ ও দ্রুত তদন্তের দাবি উঠেছে। পার্লামেন্টারি এথিক্স কমিটি বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। এই ঘটনা অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টে আচরণবিধি এবং সদস্যদের পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার মতো একটি উন্নত ও বহুসংস্কৃতির দেশে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির প্রতি এমন আচরণ দেশটির ভাবমূর্তির জন্যেও অত্যন্ত নেতিবাচক। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে আশা করছেন সকলে।